Click on the buttons to open the collapsible content.
আমরা সকলেই জানি যে, জামগাছে কখনো লেবু
ধরে না বা আমগাছে পেয়ারা। একটি বিড়াল জন্মালে, সেটি ঠিক বিড়ালের মতই দেখতে হয়। একইভাবে একটি
শিশু জন্মালে, সেটি ঠিক তার বাবা-মায়ের মতই দেখতে হয়। একথাটি সর্বস্বীকৃত যে, সব জীবিত প্রাণিদের
বাচ্চাদের সঙ্গে তাদের মাতাপিতার সাদৃশ্য বর্তমান। কিন্তু কেন এমন হয়? এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়
প্রজনন শাস্ত্রের (genetics) বংশানুগতি বিজ্ঞান (heredity) science) শাখা থেকে। বিজ্ঞানের এই শাখাতে
পিতামাতার সঙ্গে তাদের সন্তানদের সাদৃশ্যের কারণ সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়ে থাকে। এই শাস্ত্র থেকেই জানা
যায় যে, পিতামাতার কোন্ কোন্ লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্য তাদের সন্তানদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যাবে। পিতামাতার
বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণাদি সন্তানের মধ্যে অনুপ্রবিষ্ট হওয়ার আর এক নাম 'বংশানুগতি' (heredity)। পিতামাতার
শরীর থেকে 'জিন' (gene) নামক এক অতি ক্ষুদ্র কণার মাধ্যমে এই লক্ষণগুলি সন্তানের শরীরে দেখা যায়,
যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় 'inheritance'। জিন আসলে কোষেরই একটি ক্ষুদ্র অংশ। প্রতিটি কোষের
কেন্দ্রে (nucleus) থাকে প্রায় 22000 টি জিন, যার মধ্যে 11000 টি জিন পিতার শরীর থেকে এবং
11000 টি জিন মাতার শরীর থেকে, সন্তানের শরীরে বংশানুসরিত হয়। মানুষের ক্ষেত্রে এই জিনগুলি মোট 46
টি ক্রোমোসোমের মধ্যে থাকে। এই 46 টি ক্রোমোসোম থাকে কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াসের মধ্যে। সন্তান যখন
মাতৃগর্ভে আসে, তখন 23 টি ক্রোমোসোম বাবার শরীর থেকে এবং 23 টি ক্রোমোসোম মায়ের শরীর থেকে
সন্তানের শরীরে আসে। ফলে, শিশুভ্রূণের প্রতিটি কোষে থাকে 23 জোড়া ক্রোমোসোম। এই জিনই হল
বংশানুগতির একক (unit)। প্রতিটি প্রাণি বা গাছপালার ক্ষেত্রেই জিনের অর্ধাংশ আসে পুরুষ-শ্রেণি থেকে আর
বাকি অর্ধাংশ স্ত্রী-শ্রেণি থেকে। গ্রেগরি মেন্ডেল নাম এক অস্ট্রিয়ান ধর্মযাজককে এই প্রজনন শাস্ত্রের জনক বলা
হয়। মটরগাছ নিয়ে তিনি অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন এবং বংশধারা সম্বন্ধে বেশ কিছু নিয়মাবলী
দিয়েছিলেন। সেগুলি 'মেল্ডেলের সূত্র' নামে পরিচিত। তিনি পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করেন যে, পিতা এবং
মাতার শরীরের যে জিনগুলি বেশি প্রভাবশালী, সেগুলিই সন্তানের শরীরের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে। যেমন যদি
বাবা-মায়ের দুজনার চোখের রং নীল হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে সন্তানের চোখের রং ও নীল হবে। আবার, বাবার
চোখের রং যদি কালো এবং মায়ের চোখের রং বাদামি হয়, তাহলে সন্তানের চোখের রং হবে বাদামি কারণ
কালো রং -এর উপর বাদামী রং-এর একটা প্রাধান্য আছে। এজন্যই লম্বা বাবার সন্তান লম্বা এবং বেঁটে বাবার
সন্তান বেঁটে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পিতার জিনগুলি মাতার জিন অপেক্ষা বেশি প্রভাবশালী হয়। আর সেজন্যই,
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, সন্তানরা সাধারণতঃ তাদের বাবার মতই দেখতে হয় - বিশেষ ভাবে
পুত্রসন্তানরা। আর ঠিক একইভাবে, এই কারণেই আমরা আমাদের বাবার মতো দেখতে।
শীতের বিদায়ক্ষণে ফাল্গুন মাসে গাছের পাতা ঝরে পড়ার
দৃশ্য খুবই পরিচিত আমাদের কাছে। কিছু গাছ আছে, যাদের পাতা বছরে একবার ঝরে পড়ে, তাদের 'পর্ণমোচী
বৃক্ষ' (deciduous tree) বলে। আবার কিছু গাছ আছে যাদের সবসময়েই সবুজ পাতা থাকে। তাদের বলা
হয় 'চিরহরিৎ বৃক্ষ' (evergreen tree)। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, গাছের এই পাতা ঝরার ব্যাপারটি
শুধুমাত্র শীতকালেই হয় না, সারা বছরেই গাছের পাতা কিছু না কিছু ঝরে পড়ে। অবশ্য শীতকালেই এই ঘটনাটি
আমাদের কাছে খুব প্রকট হয়ে ওঠে। কিন্তু গাছের পাতা কেন ঝরে? বিজ্ঞানীরা এই ব্যাপারে অনেক গবেষণা
করেছেন। কারো কারো মতে, পাতার বৃন্ত মুখে সূক্ষ্ম এক ধরনের কোষের উদ্ভব হওয়াতেই এই ঘটনাটি ঘটে।
কিন্তু এই যুক্তি সর্বজনগ্রাহ্য নয়। অনেকে আবার ভাবেন যে, যেহেতু শীতকালেই পাতা বেশি ঝরে পড়ে, সেজন্য
পর্যাপ্ত পরিমাণ সূর্যালোকের অভাবই পাতা ঝরে পড়ার কারণ। কিন্তু এই যুক্তিও ঠিক নয়। দেখা গিয়েছে যে,
পাতার ফলকটি যদি কেটে ফেলে দেওয়া হয়, তাহলে পাতাটি খুব শীঘ্র পড়ে যায়। কিন্তু পাতার ফলকটি
আংশিকভাবে ছেঁটে দিলে, পাতাটি বেশ ভালোভাবেই বেঁচে থাকে। সুতরাং পাতার ফলকে এমন একটি বস্তু থাকে,
যেটি পাতা ঝরাকে প্রতিরোধ করে। বস্তুতঃ ফলকে 'অক্সিন' নামে এক ধরনের হরমোন থাকে, যা পাতা ঝরাকে
প্রতিরোধ করে। ফলকে যত বেশি অক্সিন তৈরি হবে, পাতা তত বেশি স্থায়ী হবে। কচিপাতার ক্ষেত্রে এই অক্সিনের
হার খুব বেশি। পাতার মাপ যখন 6-10 সেমি-এর মধ্যে থাকে, তখন এই হার থাকে সবচেয়ে বেশি। মজার
কথা যে, দেখা গিয়েছে যে গাছের সমস্ত পাতার ফলক যদি ছেঁটে ফেলা হয়, তাহলেও পাতা ঝরে পড়ার প্রবণতা
কমে যায়। এক্ষেত্রে, পাতার কোষের মধ্যে 'ইথিলিন' নামক এক রাসায়নিক পদার্থ এই কাজটি সম্পন্ন করে। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, এই অক্সিন নামক হরমোনটি পাতা ঝরে পড়ার সহায়ক ও যেমন, প্রতিরোধকও তেমন।
পাতার কোরকের মধ্যে উৎপন্ন অক্সিনের পরিমাণের উপরও নির্ভর করে পাতা ঝরে পড়ার ব্যাপারটি। এই
ঘটনাটিকে 'অক্সিন-অক্সিন সাম্য' বলা হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত পুরানো পাতার ফলকে উৎপন্ন অক্সিন কচি অগ্রস্থ
কোরকে উৎপন্ন অক্সিনের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে, ততক্ষণ পর্যন্ত পাতার জীবন স্থায়ী থাকে। চিরহরিৎ
বৃক্ষদের ক্ষেত্রে পাতা ঝরার ব্যাপারটি আংশিকভাবে সারা বছরব্যাপী চলতে থাকে বলেই আপাতদৃষ্টিতে সেই
গাছগুলিকে চিরহরিৎ বলে আমাদের মনে হয়।
কাগজ আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহার্য এক জিনিস। বইপত্র, খাতা বা অন্যান্য নানা সামগ্রী তে কাগজের ব্যবহার রয়েছে। কিন্তু দেখা গিয়েছে, বই বা অন্যান্য কাগজ বেশি পুরানো হয়ে গেলে, তার রঙ হয়ে যায় হলুদ এবং সেটি হয়ে পড়ে মড়মড়ে, যা সহজেই ছিঁড়ে যায় বা ভেঙ্গে যায়। কিন্তু কেন এমন হয়? কাগজ তৈরি হয় সাধারণতঃ উদ্ভিদের এক তন্তু থেকে, যার নাম সেলুলোজ। এই সেলুলোজ তন্তু এবং জলের সংমিশ্রণে তৈরি হয় এক মন্ড। যখন সেই মন্ড কে সূক্ষ্ম পর্দার মধ্যে দিয়ে পরিশ্রুত করা হয়, তখন ঐ সেলুলোজ তন্তুগুলি পরস্পর আবদ্ধ হয়ে পাতলা স্তরে পরিণত হয় আর এই পাতলা স্তরটিই হল কাগজ। এই সেলুলোজ হল এক প্রাকৃতিক ম্যাক্রোমলিকিউল (macromolecule) যার মধ্যে থাকে সংবেদনশীল বহু অ্যাসিটাল (acetal) বন্ধন, যেগুলি খুব দুর্বল প্রকৃতির। তারা এতটাই দুর্বল যে, অ্যাসিডের সংস্পর্শে এলে, তারা সহজেই ভেঙ্গে যায়। এই ভেঙ্গে যাওয়ার প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় অ্যাসিড-হাইড্রোলিসিস। কাগজ তৈরির প্রক্রিয়াতে কাষ্ঠমন্ডের সরলীকরণের জন্য নানা ধরনের অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়, যার ফলে কাগজের ঐসব অ্যাসিডের অবশিষ্টাংশ অনেক সময়ে থেকে যায়। এই অবশিষ্ট অ্যাসিডের উপস্থিতির জন্যই কাগজ কিছু দিন পরে মড়মড়ে হয়ে যায়। আবার কাগজ পুরানো হলে যে তার রঙ হলুদ হয়ে যায়, তার পিছনের কারণটি হল সেলুলোজ অণুর জারণ। দৃশ্য আলোকের উপস্থিতিতে আলোক-সংবেদনশীল জারণ ঘটে। সূর্যালোকের মধ্যে যে অতিবেগুনি রশ্মি উপাদান হিসাবে রয়েছে, সেই অতিবেগুনি রশ্মি সেলুলোজকে তার সমস্ত বন্ধনসহ ভেঙ্গে দিয়ে, সেলুলোজের আলোক-বিশ্লেষণ ঘটায়। সেজন্যেই, কাগজ সূর্যালোকের সংস্পর্শে খুব শীঘ্র নষ্ট হয়ে যায় কারণ সূর্যালোকের উপস্থিতিতেই অ্যাসিড হাইড্রোলিসিস, জারণ, আলোক-জারণ এবং আলোক বিশ্লেষণের মতো ভাঙ্গনমূলক বিক্রিয়াগুলি ঘটতে থাকে। এইজন্যই কাগজ পুরানো হলে, সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসার দরুণ খুব ধীরে ধীরে, তার রঙ হলুদবর্ণ ধারণ করে। এজন্যই, মূল্যবান পুঁথি বা দলিল পত্র বা ছবি যদি দীর্ঘদিন যাবৎ অক্ষত অবস্থায় সংরক্ষিত রাখতে হয়, তাহলে সেগুলিকে খুব ভালভাবে অ্যাসিড মুক্ত করে ঠান্ডা ও অন্ধকার ঘরে রাখতে হবে। পুরানো কাগজ মড়মড়ে ও হলুদ হয়ে যাওয়ার পিছনে এই হল আসল বৈজ্ঞানিক রহস্য।
মানুষ থেকে শুরু করে সব প্রাণিদেরই ঘুমের
প্রয়োজন। দিনে বা রাত্রে কোনো না কোনো সময়ে সব প্রাণিরই ঘুমের জন্য কিছুটা সময় ব্যয় হয়। আসলে ঘুম
প্রতিটি প্রাণিরই একটি সহজাত প্রবৃত্তি। সাধারণতঃ প্রতিটি মানুষ গড়ে দিনে আট ঘন্টা ঘুমের জন্য ব্যয় করে।
অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি যদি মোট 72 বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকেন, তবে তাঁর জীবনের প্রায় 24 বছর তিনি ঘুমিয়ে
কাটিয়েছেন। ব্যাপারটি যদিও কিছুটা অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়, তবুও প্রায় সত্য এ ঘটনাটি। ঘুম আমাদের
শরীরের পক্ষে একান্ত প্রয়োজন। শিশুরা দিনে আরো বেশি সময়ব্যাপী ঘুমায়। আবার বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ঘুমের
পরিমাণ কম। ঘুমানো এবং জেগে থাকা - এই চক্রটি একটি জৈবিক-চক্র (biological clock) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত
হয়, যেটি সাধারণতঃ দিবা-রাত্র চক্র দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। মানুষ যেমন শুয়ে (শয়ন) ঘুমায়, তেমন কোনো
কোনো প্রাণি বসে বসেই ঘুমায় (যেমন পাখিরা)। আবার কোনো কোনো প্রাণি দাঁড়িয়ে ঘুমায় (যেমন ঘোড়া)।
কিন্তু ঘুম সব প্রাণিরই প্রয়োজন - তা সেটা যেভাবেই হোক না কেন। মানুষ যতই ব্যস্ত বা কর্মবহুল জীবনযাপন
করুক না কেন, ঘুম অবশ্যই তার একান্ত প্রয়োজন। কথিত আছে যে, নেপোলিয়ন নাকি ঘোড়ার পিঠে বসেই
কিছুটা ঘুমিয়ে নিতেন। কিন্তু প্রশ্ন যে, এই ঘুমের প্রয়োজন কেন? ঘুম আমাদের শরীর ও মনকে চাঙ্গা করে
তোলে। দীর্ঘ ক্লান্ত ও অবসাদের পরে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কিছুটা বিশ্রাম চায়। ঘুমের মাধ্যমেই
সেই অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি কিছুটা বিশ্রাম পায়। ঘুমের অভাবে শরীরের যে কি অবস্থা হয়, সে কথা প্রায় সকলেরই
জানা। বহুদিন যাবৎ ঠিকমত ঘুম না হলে, মনঃসংযোগের অভাব, খিটখিটে মেজাজ এমনকি কাল্পনিক ভ্রান্তিও
(hallucinations) শরীরে আসতে পারে। ঘুমের অভাবে অনেক সময়ে কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়, শরীরে আসে চরম
ক্লান্তি এবং স্বাস্থ্যেরও সামগ্রিক অবনতি ঘটে। কয়েক রাত্রি যদি একনাগাড়ে ঠিকমত ঘুম না হয়, তাহলে বহুক্ষেত্রে
মানুষের চেহারায় ও মনমেজাজে লক্ষণীয় পরিবর্তন আসতে পারে। এই অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে।
চিনাবাদাম শুধুমাত্র বাচ্চাদের নয়, বড়োদেরও এক
অত্যন্ত মুখরোচক খাদ্য। মচমচে চিনাবাদাম খেতে ভালোবাসে না - এমন লোক দেখাই যায় না। আমরা
সাধারণতঃ দুই ধরনের বাদামের কথা জানি - কাজুবাদাম এবং চিনাবাদাম। কাজুবাদামের গাছ যদিও যথাস্থানে
প্রায়শঃই দেখা যায়, চিনাবাদামের গাছ খুব বেশি একটা আমাদের চোখে সাধারণতঃ পড়ে না। সেজন্যই
চিনাবাদাম গাছ সম্বন্ধে আমাদের ধ্যানধারণা কিছুটা কম। অন্যান্য গাছের ফলের মতো চিনেবাদাম গাছের ওপরে
হয় না, মাটির নিচে হয়ে থাকে - যদিও চিনাবাদামও গাছের একটি ফল। চিনেবাদাম গাছ আকারে ছোটো হয়
কিন্তু বেশ ঝাঁকড়া ধরনের হয়। গাছের কান্ডের ওপর দিকে অনেক ডালপালা ও লতাপাতা বার হওয়ার জন্যই
এরকমটা হয়। কান্ডের ঠিক নীচের দিক থেকে যে পুষ্পমঞ্জরী বার হয়, সেখানেই গাছের ফুল ধরে। এই ফুলগুলি
মাটির ঠিক ওপরেই মাটিতে স্পর্শ করে থাকে। এই ফুলের বিশেষত্ব এই যে, এই ফুলগুলি কখনোই ফোটে না।
ফুলের ভেতরেই স্ব-পরাগযোগ (self pollination) ঘটে থাকে। সেজন্য, ফুল না ফুটেই তার ভিতরে ফল তৈরি
হতে শুরু করে। ফল যখন তৈরি হতে শুরু হয়, তখন ফুলের তলার দিকে অক্সিন নামক একটি হরমোন বেশি
পরিমাণে জমে। ফলে সেখানের কোষসংখ্যা খুব দ্রুত বাড়তে থাকে। কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে, ডিম্বাশয়ের
তলায় ছোটো একটা ডাঁটির মতো অংশ তৈরি হয় এবং ঐ অংশটি ক্রমশ লম্বায় বাড়তে থাকে। একসময়ে সেটি
মাটির তলায় প্রবেশ করে এবং তার সাথেই ফুলেরও অনুপ্রবেশ ঘটে। এইভাবেই চিনাবাদাম ফুল পরাগসংযোগের
পরেই মাটির তলায় প্রবেশ করে। মাটির অভ্যন্তরের জল শোষণ করে বাদাম ফল বৃদ্ধি পেতে থাকে। শুকনো
মাটির থেকে ভেজা মাটিতে বাদামফলের ফলন বেশি হয় এবং ঐ মাটি থেকেই জলের যোগান পাওয়া যায়
বলেই, চিনাবাদাম মাটির নীচে হওয়ার এক অন্যতম কারণ।
মেঘহীন পরিষ্কার রাত্রে আকাশের দিকে তাকালে,
আমাদের চোখে পড়ে লক্ষ লক্ষ উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক, যারা মিটমিট করছে বলে মনে হয়। এদেরকে আমরা 'তার'
বলি। পৃথিবী থাকে এই তারারা বহুদূরে থাকে। আকাশে মঙ্গল, বুধ, শুক্র প্রভৃতি অন্য গ্রহদেরও দেখা যায় কিন্তু
সেই সব গ্রহেরা আমাদের চোখে মিটমিট করছে বলে মনে হয় না। অথচ তারাদের ক্ষেত্রেই শুধু তারা মিটমিট
করছে বলে মনে হয় - কিন্তু কেন? তারাদের মিটমিট করার নেপথ্যে এক বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে। তারাদের
থেকে নির্গত কিরণরশ্মি সমান্তরাল ভাবে এসে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ঢোকে এবং এলোমেলো বায়ুস্রোতের মধ্যে
পড়ে। উষ্ণতাভেদে বায়ুমন্ডলের স্তরগুলির ঘনত্ব এবং প্রতিসরাঙ্ক (refractive index) ভিন্নমানের হয়, যতই
পৃথিবী থেকে উপরে ওঠা যায়, ততই উষ্ণতা কমে এবং বায়ুর স্রোত, পরিবহন ইত্যাদির পরিবর্তন হতে থাকে।
ফলে তার মধে দিয়ে আসা রশ্মির পথ এলোমেলোভাবে বদলায়। ফলে আমাদের চোখে পৃথিবী থেকে, এদের
ঔজ্জ্বল্য কমা-বাড়া হতে দেখা যায়। ফলে, আমরা তাদের মিটমিট করতে দেখি। আমরা যদি মহাকাশ থেকে
(যেখানে বায়ুমন্ডল নেই) তারাদের পর্যবেক্ষণ করি, তাহলে কখনোই তাদের মিটমিট করতে দেখব না। তখন
তারারাও সূর্য বা অন্যান্য গ্রহদের মতো স্থির বলে মনে হবে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক বাস্তব অভিজ্ঞতা যে, চিনি
বা নুন জাতীয় জিনিস জলের মধ্যে ফেলার সঙ্গে সঙ্গেই সেগুলি গুলে যায় বা দ্রবীভূত হয় কিন্তু তেল, চর্বি বা
মোম জাতীয় জৈব পদার্থগুলি জলে দ্রবীভূত হয় না। কিন্তু কেন এমন হয়? যেকোনো জিনিসকে দ্রবীভূত
করার জন্য জলকেই সাধারণতঃ দ্রবণ হিসাবে বেশি ব্যবহার করা হয়। বিজ্ঞান বলে যে, সমজাতীয় পদার্থ
সাধারণতঃ পরস্পরকে দ্রবীভূত করে, অর্থাৎ, যে সমস্ত পদার্থের একই ধরনের অণু থাকে, তারাই শুধুমাত্র পরস্পর
মিলিত হয়ে দ্রবণ সৃষ্টি করে। জলে যে জিনিসটি দ্রবীভূত হবে, জলের অনুর সঙ্গে সেই জিনিসটির বৈদ্যুতিক বন্ধন
সৃষ্টি করার ক্ষমতা থাকতে হবে। যেহেতু জলের প্রতিটি অণুর একদিকে সামান্য পরিমাণ ধনাত্মক আধান আর
অন্যদিকে কিছুটা ঋণাত্মক আধান থাকে, সেজন্য যে জিনিসটি জলে দ্রবীভূত হবে (নুন, চিনি ইত্যাদি), তাদের
অণুর বৈদ্যুতিক আধান যদি এমন হয় যে, সেটি সহজেই জলের অণুর সঙ্গে বৈদ্যুতিক বন্ধন সৃষ্টি করতে পারে,
তাহলে ঐ বস্তুটি সহজে জলে দ্রবীভূত হবে এবং মিশে যাবে। জলের অণুগুলি সোডিয়াম ও ক্লোরাইড আয়নের
মধ্যকার আকর্ষণ বল কমিয়ে দেয় ফলে, সেই আয়নের মধ্যকার দূরত্ব বৃদ্ধি পায়। এর ফলে, ঐ আয়নগুলি জলে
দ্রবীভূত হয়ে যায় এবং সোডিয়াম ক্লোরাইডের (নুন জল) দ্রবণ সৃষ্টি হয়। পক্ষান্তরে, তেলের অণুগুলি এমনই
যে, সেগুলি জলে দ্রবীভুত হয় না। তার কারণ, তেলের অণুগুলির ভিতরকার বন্ধন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তেলের
অণুগুলির আকার অনেক বড়ো। তেলের অণুর পরমাণুর (atoms) সংখ্যা জলের পরমাণুর সংখ্যা থেকে অনেক
বেশি। দেখা গিয়েছে যে, তেলের ফোঁটা জলে না মিশে গিয়ে জলের ওপরে আসে। তার কারণ, প্রথমতঃ
তেলের ঘনত্ব জলের ঘনত্বের থেকে অনেক কম। দ্বিতীয়তঃ, তেলের নিজস্ব অণুগুলির মধ্যে যে আকর্ষণ বল থাকে,
সেই আকর্ষণ বল তেল ও জলের অণুর মধ্যবর্তী আকর্ষণ বল অপেক্ষা অনেক বেশি। সেজন্য জলের মধ্যে
থাকাকালীন তেলের অণুগুলি একে অপরের থেকে দূরে সরে যায় না - অর্থাৎ তেল জলে দ্রবীভূত হয় না, আর
সেজন্যই তেল এবং জল কখনোই একত্রে মেশে না।
দুধ বা দই যে সাদা রং-এর হয়, সেটা আমাদের সকলের
বাস্তব অভিজ্ঞতা। কিন্তু দুধের রং কেন সাদা হয়? একথা আমাদের জানা আছে যে, সূর্যের সাদা আলো
প্রকৃতপক্ষে সাতটি রং-এর সমারোহে তৈরি। সেই সাতটি রং হল যথাক্রমে বেগুনি (violet), গাঢ় নীল
(indigo), নীল (blue), সবুজ (green), হলুদ (yellow), কমলা (orange) এবং লাল (red)। এককথায়,
সামগ্রিকভাবে এদের বলা হয় VIBGYOR। সূর্যের সাদা আলোর এই উপাদানগুলিকে একটি প্রিজমের সাহায্যে
পৃথক করা সম্ভব। কোনো বস্তুর উপর যখন আলো এসে পড়ে এবং তখন সেই বস্তু থেকে প্রতিফলিত রশ্মি
আমাদের চোখে এসে পড়ে এবং আমরা বস্তুটিকে দেখতে পাই। বস্তুটি থেকে প্রতিফলিত আলোকরশ্মির রং বা
বর্ণের উপর নির্ভর করে যে, বস্তুটিকে আমরা কি রঙের দেখব। বস্তুটি যে রং প্রতিফলিত করবে, আমরা বস্তুটিকে
সেই রং-এর বলে দেখব। দুধের ক্ষেত্রে তার আণবিক গঠন এমনই যে, তারা সূর্যের সাত রঙের কোনোটিকেই
শোষণ করতে পারে না। সব কয়টি রংকেই দুধ প্রতিফলিত করে দেয়। আর সেজন্যই, আমরা দুধকে ঠিক
সূর্যরশ্মির মতই দেখি। কিন্তু সেই সাদা দুধকে যদি আমরা শুধুমাত্র একটি লাল আলোতে দেখি, সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র
লাল আলো দুধের গায়ে এসে পড়ে এবং দুধ তার স্বাভাবিক ধর্মবশতঃ ঐ লাল রংকে প্রতিফলিত করবে। ফলে,
ঐ সাদা দুধকে তখন আমরা লাল রঙের দুধ হিসাবে দেখতে পাব। ঠিক একইভাবে, যদি ঐ দুধকেই আমরা
সবুজ বা নীল আলোতে দেখি, তাহলে সেই দুধকেই আমরা যথাক্রমে সবুজ বা নীল রং হিসাবে দেখব। এই
হল দুধ সাদা রঙের হওয়ার কারণ।
ফুল ভালোবাসে না, এমন কেউ হয় না। নানা রঙের বাহারী
ফুল আমাদের সকলেরই এক আদরের জিনিস। এই ফুল আমরা পাই বিভিন্ন গাছ থেকে। কিন্তু কখনো কি আমরা
একথা ভেবেছি যে, গাছে ফুল ফোটে কেন? গাছের জীবনচক্রে সাধারণতঃ দুটি দশা। একটি হল 'অঙ্গজ-দশা'
(vegetative phase) এবং অপরটি হল 'জনন দশা' (reproductive phase)। এর মধ্যে অঙ্গজ দশাতে
বীজ থেকে চারা গাছ, চারা গাছ থেকে কচি গাছ, কচি গাছ থেকে গাছের বড়ো হয়ে ওঠা - ডালপাতা গজানো,
পাতা বার হওয়া এবং গাছের লম্বা হয়ে ওঠা - এ সব ঘটে। গাছের কান্ডের অগ্রভাগে যে মুকুল থাকে, তাকে
বলা হয় 'শীর্ষ মুকুল' বা 'অগ্রমুকুল'। এই মুকুলই গাছকে বেড়ে ওঠার ব্যাপারে সাহায্য করে। আবার 'কাক্ষিক
মুকুল' থেকেই গাছের ডাল বা শাখা তৈরি হয়। এভাবেই একটি গাছ ক্রমশ আস্তে আস্তে বেড়ে ওঠে এবং
পরবর্তীকালে তার 'জননদশা'র দিকে এগিয়ে চলে। বছরের কোনো একটা বিশেষ সময়ে কাক্ষিক মুকুল বা
অগ্রমুকুল হয়তো কোনো কারণে বাড়তে পারে না। তখন তারা 'পুষ্পমুকুল'-এ রূপান্তরিত হয়। আর তখনই সৃষ্টি
হয় ফুলের। এই সময় থেকেই শুরু হতে থাকে জননদশার। ফুল কোনো গাছে ফুটতে হলে, সেই গাছে তার
অঙ্গজ মুকুলকে পুষ্পমুকুলে রূপান্তরিত হতেই হবে। কিন্তু কীভাবে এই রূপান্তরিত হতেই হবে। কিন্তু কীভাবে এই
রূপান্তর ঘটে? উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন যে, গোটা ব্যাপারটার মূলে থাকে একপ্রকার রাসায়নিক যৌন
হরমোন, যা বেশি পরিমাণে অঙ্গজমুকুলে জমা হলে, সেই অঙ্গজ মুকুল রূপান্তরিত হয় পুষ্পমুকুলে। এই পুষ্পমুকুল
একবার তৈরি হলে, হরমোনের কাজ অতি দ্রুত সম্পন্ন হতে থাকে। আর তার ফলে, পুষ্পমুকুল থেকে সৃষ্টি হয়
ফুলের। প্রকৃতপক্ষে, অঙ্গজমুকুল থেকে পুষ্পমুকুলে রূপান্তরিত হওয়া বা পুষ্পমুকুল থেকে ফুল তৈরি হওয়া -
এসবই নিয়ন্ত্রিত হয় ঐ বিশেষ ধরনের হরমোন দ্বারা।
মানুষের শরীরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে
পাকস্থলী এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আমরা যখন কোনো খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করি, তখন সেই খাদ্যকে হজম
করানোর কাজ হল এই পাকস্থলীর (stomach)। যদি কোনো কারণে পাকস্থলীর কাজকর্ম ব্যাঘাত ঘটে, তাহলে
আমাদের শরীরে পাচনক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে এবং খাদ্যগ্রহণের পরে সেগুলির হজম হওয়ার ব্যাপারে নানা গন্ডগোল
দেখা দেয়। এখন একটা প্রশ্ন স্বভাবতঃই আমাদের মনে আসতে পারে যে, পাকস্থলী যখন সব কিছুই হজম
করাতে পারে, তখন সে নিজেকে হজম করে নেয় না কেন? ব্যাপারটি সত্যই খুব আশ্চর্যের যে, যে অঙ্গটি তার
মধ্যেকার সব কিছু হজম করে নিতে পারে, সে নিজেকে হজম করে না কেন? আসলে, আমাদের পাকস্থলী
একটি থলির মতো, যা নানা পেশীদ্বারা গঠিত। পাকস্থলীর গায়ে যে সব গ্রন্থি থাকে, তার থেকে বার হওয়া কড়া
অম্লের (acid) সাহায্যেই পাকস্থলী তার ভিতরে আসা সব খাদ্যদ্রব্যকে হজম করে ফেলতে পারে। কিন্তু যাতে
পাকস্থলী তার নিজের অংশগুলিকে ঐ উপায়ে হজম করে ফেলতে পারে না, সেজন্য 'মিউকাস কোষ' দ্বারা উৎপন্ন
একটি পুরু ও মোটা মিউকাসের স্তর (membrane) পাকস্থলীর গায়ের আবরণে লাগানো থাকে। অল্পপরিমাণ
ক্ষার ধর্মবিশিষ্ট (alkaline) এই স্তরটিই পাকস্থলীর নিজস্ব পেশীগুলিকে অম্লরসের দ্বারা হজম হয়ে যাওয়া থেকে
রক্ষা করে। যদি পাকস্থলীর গায়ের আবরণের ঐ স্তরটি কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তাহলে পাকস্থলী ঐ ক্ষতিগ্রস্ত
স্তরের কোষগুলিকে ফেলে দেয় এবং সেই জায়গায় নতুন কোষ জন্ম নেয়। আর যদি কোনো কারণে ঐ কোষগুলি
বেশি পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে রক্ষাকবচ হিসাবে নিঃসৃত ক্ষারধর্মবিশিষ্ট স্তরটির কোষের পরিমাণ কমে
যায় এবং পাকস্থলীর গায়ের আবরণটি যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তার ফলেই তখন পাকস্থলীতে অত্যন্ত পীড়াদায়ক ও
কষ্টকর 'আলসার' (ulcer) রোগ দেখা দেয় ও ক্ষেত্রবিশেষে মানুষের জীবনসংশয়ও দেখা দেয়। এই হল
পাকস্থলীর নিজেকে হজম না করে নেওয়ার রহস্য।
আমাদের শরীরে যে কোনো জায়গায়
কেটে গেলে আমরা ব্যথা অনুভব করি। এটা স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এটাও আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা যে,
আমাদের চুল বা নখ কাটার সময়ে আমরা কোনোরকম ব্যথা অনুভব করি না। আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে,
আমাদের শরীরের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ মাথা থেকে চুল কেটে ফেলার সময়ে বা হাত-পায়ের নখ কাটার
সময়ে আমরা কোনোরকম ব্যথা অনুভব করি না। কিন্তু কেন এমন হয়? আসলে আমরা তখনই ব্যথা অনুভব
করি যখন আমাদের শরীরে কোনো স্নায়ু বা শিরা আঘাত পেয়ে উত্তেজিত হয়। শিরা বা স্নায়ুর আঘাতই আমাদের
শরীরে ব্যথার অনুভূতি জাগায়। আমাদের চুলের বা নখের অগ্রভাগ বা গোড়ায় যেহেতু কোনো স্নায়ু বা শিরা নেই,
সেজন্য চুল বা নখ কাটলে আমরা কোনো ব্যথা অনুভব করি না। কিন্তু লক্ষণীয় একটা বিষয় হল এই যে, নখের
একেবারে শেষ প্রান্তে (base) বা চুলের শেষপ্রান্তে, যেটি মাথার চামড়ার ঠিক ভিতরে থাকে, সেই অংশের
কোষগুলি জীবিত। সেজন্য যদি নখ কাটার সময়ে তার শেষ প্রান্ত, যেটি চামড়ার সঙ্গে লেগে থাকে অথবা চুল
একেবারে ছেঁটে ফেলার সময়ে (মাথা ন্যাড়া হওয়ার সময়ে) আমরা কিছুটা ব্যথা অনুভব করি ঐ জীবন্ত কোষগুলি
থাকার জন্য। সুতরাং দেখা যায় যে, শরীরের কোনো অংশে ব্যথা অনুভব করা বা না করা সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রিত
হয়, জীবন্ত কোষের সেই অংশে উপস্থিত থাকা বা না থাকার জন্য। এজন্যই আমরা চুল বা নখ কাটার সময়ে
কোনোরকম ব্যথা অনুভব করি না।
আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা এই যে পৃথিবীর সর্বত্র একই সময়ে আমরা সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত হতে দেখি না, পূর্বদিকের দেশগুলিতে (অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ইত্যাদি) সূর্যোদয় হয় অপেক্ষাকৃত আগে এবং পশ্চিমের দেশগুলিতে (ইংল্যান্ড, আমেরিকা ইত্যাদি) সূর্যোদয় হয় পরে। একইভাবে পূর্বের দেশগুলিতে আগে সূর্যাস্ত হয় এবং পশ্চিমের দেশগুলিতে সূর্যাস্ত হয় পরে।
কিন্তু এমন কেন হয়?
এই ঘটনার মূল কারণ হল পৃথিবীর আকার এবং তার আহ্নিকগতি। পৃথিবী আকারে প্রায় একটি গোল বলের মতো। সেটি না হয়ে, পৃথিবী একটি যদি সমতলের আকারের হত, তাহলে পৃথিবীতে শুধুমাত্র দিন ও রাত্রিই দেখা যেত। প্রভাত, মধ্যাহ্ন, অপরাহ্ন বা সন্ধ্যা এসব কিছুই অনুভূত হত না। পৃথিবীর আকার গোলাকার হওয়ার জন্যই এবং পৃথিবী তার নিজ অক্ষরেখাকে কেন্দ্র করে নির্দিষ্ট বেগে ঘূর্ণায়মান (আহ্নিকগতি) বলেই আমরা দিনের নানা সময় (প্রভাত, মধ্যাহ্ন, সন্ধ্যা ইত্যাদি) অনুভব করি। পৃথিবী ঘূর্ণায়মান না হলে, তার একাংশে চির দিবা এবং অপর অংশে চিররাত্রি থাকতে দেখা যায়।
আবার লক্ষ্য করার বিষয় যে, পৃথিবীর কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানের সব অংশে একই সময়ে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত হয় না। সেই স্থানের প্রথমে পর্বতশৃঙ্গে(যদি থাকে), তারপরে নিচু জায়গায় এবং সবশেষে উপত্যকা অঞ্চলে সূর্যরশ্মি পড়ে। একই কারণে পর্বতশৃঙ্গে সূর্যাস্ত হয় সবশেষে, তার আগে নিচু জায়গায় এবং সর্বপ্রথম উপত্যকা অঞ্চলে।
সুতরাং, পৃথিবীর আকৃতি গোলাকার হওয়ার জন্য এবং পৃথিবীর তার নিজ অক্ষরেখা বরাবর ঘূর্ণনের জন্যই আমরা পৃথিবীর সব জায়গায় একই সময়ে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত হতে দেখি না।
ক্ষুধা পাওয়া মানুষের এক সহজাত প্রবৃত্তি। সব প্রাণিরই ক্ষুধা পেয়ে থাকে এবং মানুষও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, মানুষের ক্ষুধা পায় কেন? এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হতে পারে যে, পেট খালি থাকলে ক্ষুধা পায় আর ভর্তি থাকলে ক্ষুধা পায় না। কিন্তু গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ক্ষুধার অনুভূতির সঙ্গে উদর-পূর্তি বা খালি থাকার কোনো সম্পর্ক নেই। প্রাণির ক্ষুধার উদ্রেক বা অনুভূতি সম্পূর্ণভাবে এক স্নায়বিক পদ্ধতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। রক্তে পুষ্টি-সাধক পদার্থের অভাব ঘটলে মস্তিষ্কের 'ক্ষুধাকেদ্র' (hunger centre) সেই সংবাদ পৌঁছায়। এই কেন্দ্রটিই আমাদের পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত্র ও বৃহদন্ত্রের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে, যখন আমাদের মস্তিষ্কে ক্ষুধা-উত্তেজক কেন্দ্র উদ্দীপিত হয়, তখন দেহের সর্বত্র স্নায়ুতে ক্ষুধার অনুভূতি ছড়িয়ে পড়ে। আবার খাদ্যগ্রহণের পরে ক্ষুধা-নিবৃত্তি কেন্দ্রটি উদ্দীপিত হয় ও শরীরে পরিতৃপ্তি আনে। আসলে আমাদের মস্তিষ্কের 'ক্ষুধা-উত্তেজক' কেন্দ্র এবং ক্ষুধা-নিবৃত্তি' কেন্দ্র দুইটির ঘাত-প্রতিঘাতের দ্বারা ক্ষুধার উদ্রেক ও ক্ষুধা-নিবারণ প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। কখন কোন্ কেন্দ্রটি উত্তেজিত হবে, সেটি নির্ভর করে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণের উপর। যখন আমাদের ক্ষুধার উদ্রেক হয়, তখন আমরা কোনো বিশেষ ধরনের খাদ্য দাবী করি না। যে কোনো ধরনের খাদ্য হলেই আমাদের ক্ষুধার নিবৃত্তি হয়। খাদ্যের প্রধান উপাদান হল প্রোটিন, ভিটামিন, কার্বোহাইড্রেট, খনিজপদার্থ ও জল। প্রত্যেকটি উপাদানের পৃথক পৃথক ভূমিকা আছে। শরীরের বৃদ্ধি ও মাংশপেশীর গঠনে ও ক্ষতিপূরণে প্রোটিন ব্যবহৃত হয়, কার্বোহাইড্রেট শরীরে তাপশক্তি যোগান দেয়; খনিজপদার্থ শরীরে হাড় বা টিস্যু গঠনে সাহায্য করে ইত্যাদি। জল শরীরের বিভিন্ন কোষের প্রধান উপাদান এবং অক্সিজেনকে শরীরের বিভিন্ন অংশে পরিবহণ করতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীদের মতে, রক্তে গ্লুকোজের সমতা বা হ্রাস-বৃদ্ধিই ক্ষুধা-উদ্দীপক ও ক্ষুধা-নিবৃত্তি কেন্দ্রগুলিকে প্রয়োজনমত উদ্দীপ্ত করে তোলে। এছাড়াও, শরীরে পুষ্টি সাধক পদার্থের অভাবের জন্যও শরীরে ক্ষুধার উদ্রেক হতে পারে। এইভাবেই পর্যায়ক্রমে ক্ষুধার উদ্রেক ও তার নিবৃত্তি প্রক্রিয়া আমাদের শরীরে কাজ করে চলেছে। অবশ্য এই বিষয়ে এখনো বহু গবেষণা চলছে।
আমাদের সকলের বাস্তব অভিজ্ঞতা এই যে, প্রায় সব গাছের পাতার রঙ সবুজ হয়। অবশ্য যখন কোনো গাছে নতুন পাতার আবির্ভাব হয়, তখন তাদের বর্ণ থাকে ফ্যাকাশে লাল (pink)। কিছুদিন পরে সেগুলি সবুজ রঙ ধারণ করে। কিন্তু গাছের পাতার রঙ সবুজ হয় কেন? এর পিছনে কী বৈজ্ঞানিক তথ্য আছে? কোনো বস্তুর উপর যখন সূর্যালোক পড়ে, তখন সেই বস্তুটি যে রঙটি প্রতিফলিত হয়, বস্তুটিকে আমরা সেই রঙের হিসাবে দেখি। গাছের পাতার মধ্যে বিশেষ এক ধরনের পদার্থের উপস্থিতির জন্যই গাছের পাতাকে সবুজ দেখায়। এই বিশেষ পদার্থটির নাম 'ক্লোরোফিল' (chloro-phylll)। কিন্তু পাতার মধ্যে যদি বেশি পরিমাণে 'ক্যারোটিন' থাকে, তাহলে পাতার রঙ হলুদ হয়। যে পাতার ক্লোরোফিল ও ক্যারোটিনের পরিমাণ প্রায় সমান সমান থাকে, সেই পাতার রঙ তখন পীতাভ সবুজ (yellowish green) রঙের হয়। দেখা গিয়েছে যে, কখনো কখনো গাছের কচি পাতার মধ্যে anthocyanin নামে একপ্রকার পদার্থ থাকে, যার প্রভাবে পাতাটি একটু লালচে ধরনের হয়। তার পরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাতার মধ্যে ক্লোরোফিল ও ক্যারোটিন উৎপন্ন হওয়ার ফলে, পাতার রঙ সবুজ হতে থাকে। সূর্যের আলো যখন পাতার উপরে পড়ে, তখন ঐ ক্লোরোফিলের অণুগুলি সূর্যালোকের সবুজ রঙটিকে প্রতিফলিত করতে পারে এবং বাকি রঙগুলিকে পাতাটি শোষণ করে নেয়। আর ঐ প্রতিফলিত সবুজ রঙটি আমাদের চোখে এসে পড়ে বলে, আমরা গাছের পাতাকে সবুজ হিসাবে দেখি। এই ক্লোরোফিল -এর সাহায্যেই রাসায়নিক প্রক্রিয়ায়, গাছ তার খাদ্য উৎপাদন করে। এই প্রক্রিয়াকে বলে 'সালোক-সংশ্লেষণ' বা photosynthesis। ছত্রাকের (fungus) মতো কিছু উদ্ভিদের মধ্যে এই ক্লোরোফিল উপস্থিত থাকে না। সেজন্য তারা তাদের খাদ্য নিজেরা তৈয়ারি করতে পারে না। সেজন্য অন্যান্য জীবিত উদ্ভিদ বা প্রাণির উপরেই এদের নির্ভর করতে হয়। সেজন্য এই ধরনের উদ্ভিদদের বলা হয় 'পরজীবী উদ্ভিদ' (parasites)। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, গাছের এক মূল উপাদান ক্লোরোফিলই গাছের পাতার রঙ সবুজ দেখতে হওয়ার জন্য দায়ী।
এশিয়া মহাদেশের জাপান দেশটি নানা ব্যাপারে যথেষ্ট উন্নতিশীল দেশ হিসাবে পরিচিত। এছাড়াও, জাপানকে 'উদীয়মান সূর্যের দেশ' (Land of the rising Sun) বলা হয়ে থাকে। কিন্তু কেন জাপানকে এই আখ্যা দেওয়া হয়েছে? আমাদের অভিজ্ঞতা বলে যে, পৃথিবীর আহ্নিকগতির জন্য সূর্যের আপাত গতি আকাশে দেখা যায় এবং পৃথিবীতে দিনরাত্রির অনুভূতি হয়। আমরা প্রতিদিন সূর্যকে পূর্ব আকাশে ভোর বেলায় উঠতে দেখি - বেলা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সে মধ্যগগনে বিরাজ করে (মধ্যাহ্ন) এবং সন্ধ্যায় পশ্চিম আকাশে অস্ত যায়। পৃথিবীর আকার গোলাকার হওয়ার জন্য, পৃথিবীর সর্বত্র একই সময়ে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত হয় না, গোলাকৃতি পৃথিবীর পূর্বদিকের দেশগুলিতে প্রথমে সূর্যোদয় হয়। সেখানে আগে মধ্যাহ্ন হয় এবং আগে সূর্যাস্ত হয়। পৃথিবীর মানচিত্র অনুযায়ী, জাপান পূর্বগোলার্ধের একদম পূর্বপ্রান্তে অবস্থিত। তার পরে, অনন্ত বিস্তৃত প্রশান্ত মহাসাগর। যেহেতু জাপান পূর্ব গোলার্ধের একেবারে পূর্বদিকের শেষপ্রান্তের দেশ, সেজন্য জাপান দেশটিই প্রথম সূর্যকে পূর্বদিকে দেখতে পায়। তারপর ক্রমশ অপেক্ষাকৃত পশ্চিমদিকের দেশগুলিতে সূর্যোদয় হতে থাকে। জাপান দেশটিকে সেজন্য 'নিপ্পন' (Nippon) বলা হয়। জাপানি ভাষায় 'নিপ্পন' শব্দটির অর্থ হল 'উদীয়মান সূর্যের দেশ'। প্রকৃতপক্ষে, জাপানে সূর্যোদয় হয় ভারতীয় সময় থেকে প্রায় 3 ঘন্টা 30 মিনিট আগে অর্থাৎ সেখানের সময় ভারতীয় স্থানীয় সময় থেকে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা এগিয়ে থাকে। সুতরাং, আমাদের দেশে যখন সকাল 6টা বাজে, তখন জাপানে (টোকিও) সকাল সাড়ে নয়টা বাজে। এজন্যই জাপানকে উদীয়মান সূর্যের দেশ বলা হয়ে থাকে।
আমরা সাধারণতঃ দেখে থাকি যে, একটুকরো বরফ কোনো পাত্রে জলের উপরে ভেসে থাকে। হিমশৈল (iceberg) হল আসলে বরফের পাহাড়। সুতরাং, দেখা গিয়েছে যে হিমশৈলও জলে ভেসে থাকে। সমুদ্রে খুব ঠান্ডা জলে, প্রায়শই হিমশৈলকে ভেসে থাকতে দেখা যায়। প্রসঙ্গগতঃ উল্লেখযোগ্য যে, 1912 সালের 15 এপ্রিল ব্রিটিশ জাহাজ টাইটানিক তার প্রথম সমুদ্রযাত্রাতেই সাউদাম্পটন থেকে নিউ ইয়র্ক যাওয়ার পথে অতলান্তিক মহাসাগরে এক বিশাল ভাসমান হিমশৈলের সঙ্গে ধাক্কা লাগায়, ডুবে যায়। এখন প্রশ্ন হল যে, হিমশৈল জলে ভাসে কেন? আমরা জানি যে, জল জমে বরফে রূপান্তরিত হয়। হিমশীতল মেরু অঞ্চলে অথবা উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে চলমান বরফের স্তূপকে বলে হিমবাহ (glacier)। মহাদেশীয় হিমবাহ যখন সমুদ্রে এসে পড়ে, তখন যে বিশাল বিশাল বরফের চাঙড় সমুদ্রে ভাসতে থাকে, তাদেরকেই বলা হয় 'হিমশৈল'। বরফের ঘনত্ব জলের ঘনত্বের চেয়ে কম কারণ প্রতি 11 ঘনসেমি জলের পরিমাণ জমে বরফে রূপান্তরিত হলে, বরফের আয়তন হয় 12 ঘনসেমি। এজন্যই বরফ জলে ভেসে থাকে। ভাসমান অবস্থায় হিমশৈলের 1/9 ভাগ অংশ থাকে জলের উপরে আর বাকি 8/9 অংশ থাকে জলের তলায়। উপর থেকে দেখলে সেজন্য বুঝা যায় না যে, কি বিশাল বরফের স্তূপ জলের তলায় ডুবে থাকে। একটি হিমশৈল গঠন ও প্রবাহিত হওয়ার সময়ে, তার সঙ্গে নিয়ে আসে প্রচুর পরিমাণ কাদা, পলি, নুড়িপাথর ইত্যাদি। এইগুলি পরবর্তীকালে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের সমুদ্রে এসে, সমুদ্রের গভীরতা হ্রাস করে দেয়, যার ফলে সেই সমুদ্রে চলাচলকারী জাহাজের সঙ্গে হিমশৈলের ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কা থাকা। সেজন্য যাত্রাপথে নিশ্চিন্ত ও নিরাপদ করার জন্য মেরু অঞ্চলের দেশগুলি রক্ষীজাহাজ রাখে, যারা যাত্রাপথে হিমশৈলের সম্ভাব্য অবস্থানের কথা জানাতে পারে। আসলে বরফের ঘনত্ব জলের ঘনত্বের চেয়ে কম হওয়ার জন্যই, বরফ বা হিমশৈল জলের উপর ভেসে থাকে।
মেঘাচ্ছন্ন আকাশ প্রায়শই আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়। কিছু মেঘ বর্ষাকালে জলভরা থাকে, যখন সেই মেঘের মধ্যে অসংখ্য জলকণা বা জলবিন্দু থাকে। বিভিন্ন মেঘে এই জলকণার পরিমাণ বিভিন্ন ধরনের হয়। মেঘ কখনো দেখায় সাদা, কখনো ধূসর আবার কখনো কালো। কিন্তু জলভরা বৃষ্টির মেঘ সবসময়ে কালো দেখায় কেন? যখন আলো কোনো বস্তুর উপর এসে পড়ে, তখন ঐ আলোর কিছুটা অংশ বস্তুটি শোষণ করে নেয় আর বাকি অংশটা বস্তুটি থেকে প্রতিফলিত হয়। সাধারণতঃ সব উজ্জ্বল বস্তুই আলোর খুব ভালো প্রতিফলক। আবার একটি কালো বস্তু (black body) আলোর বেশ ভালো শোষক। আসলে, আলোর মধ্যকার সব বর্ণগুলি যদি কোনো বস্তু সম্পূর্ণভাবে শোষণ করে নেয়, তখন সেই বস্তুটিকে কালো বর্ণের দেখায়। একই কারণে সূর্যের আলো যখন মেঘের উপরে পরে, তখন সেই মেঘ যদি সূর্যালোকের সব বর্ণকেই প্রতিফলিত করে, তাহলে সেই মেঘকে সাদা বলে মনে হয়। কিন্তু কোনো মেঘ যদি সূর্যালোকের সব বর্ণকেই শোষণ করে নেয়, তখন সেই মেঘকে সম্পূর্ণ কালো বলে মনে হবে। যেহেতু জলভরা বৃষ্টির মেঘে অসংখ্য জলকণা থাকে সেজন্য তারা সূর্যের আলোকের সব কয়টি বর্ণকেই শোষণ করে নেয়। ফলে ঐ জলভরা মেঘকে আমরা কালো বর্ণের মেঘ হিসাবে দেখি। এজন্যই আকাশে যখন প্রচুর পরিমাণ কালো মেঘের সঞ্চার হয়, তখন সূর্যালোকের পরিমাণ কম বলে মনে হয় এবং তখন দিনের বেলাতেও চারিদিক কেমন অন্ধকার বলে মনে হয়। কারণ তখন সূর্য থেকে আসা আলোর প্রায় অধিকাংশ অংশটাই ঐ সব কালো মেঘ শোষণ করে নেয়। আর সেজন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সূর্যালোক পৃথিবীতে এসে পৌঁছাতে পারে না। চারিদিক অন্ধকার বলে মনে হয় তখন। আবার কখনো কখনো কোনো মেঘের মধ্যে আমরা উজ্জ্বল এক ফালি দেখতে পাই। প্রকৃতপক্ষে মেঘের মধ্যে এই সব অংশে ছোটো ছোটো বরফের কণা উপস্থিত থাকে। এইসব মেঘ আকাশে খুব উঁচুতে থাকে। বরফের কণাগুলি স্বচ্ছ হওয়ায়, সূর্যের আলোর সবটাই তাদের ভিতর দিয়ে চলে যেতে পারে এবং যায়। আর সেজন্যই মেঘের ঐ অংশগুলিকে আমরা এক উজ্জ্বল ফালি হিসাবে দেখতে পাই। এই হল বৃষ্টির মেঘের কালো হওয়ার কারণ এবং রহস্য।
জেব্রা প্রাণিটিকে সচরাচর দেখা না গেলেও, যে কোনো চিড়িয়াখানাতে তাদের দেখা মেলে। এই জেব্রা প্রকৃতপক্ষে ঘোড়ার পরিবারভুক্ত প্রাণি কিন্তু এই পরিবারের অন্যান্য সব প্রাণিদের থেকে এদের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য এই যে, এদের শরীরে আগাগোড়া ডোরাকাটা দাগ থাকে। মাত্র তিন শ্রেণির জেব্রার অস্তিত্ব এই পৃথিবীতে আছে। এই তিন শ্রেণির নাম যথাক্রমে Equus Quagga, Equus Grevy এবং Equus Zebra। এদের মধ্যে প্রথমটি হল সমতলের জেব্রা, যা পাওয়া যায় পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকাতে। দ্বিতীয় শ্রেণিটি সর্ববৃহৎ আকারের, কানগুলি বড়ো বড়ো এবং গায়ে ডোরাকাটা দাগ থাকে। এগুলি দেখা যায় সোমালিয়াতে এবং তৃতীয় শ্রেণিটি হল পার্বত্য জেব্রা এবং পাওয়া যায় নামিবিয়া অঞ্চলে। এদের গায়েও সরু সরু ডোরাকাটা দাগ থাকে। সব শ্রেণির জেব্রাদের গায়ে যখন ডোরাকাটা দাগ থাকে, তখন মনে করা যায় যে, ঐ দাগগুলি থাকার পিছনে নানাপ্রকার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রচেষ্টা হয়েছে, তবুও সেই ব্যাখ্যাগুলির কোনো প্রামাণ্য তথ্য নেই। কারো কারো মতে, ঐ দাগগুলি নাকি একটি ঝলমলানি সৃষ্টি করে এবং ফলে আলো-ছায়া অঞ্চলে বাস করা জেব্রাগুলি শত্রুদের হাত থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে। সিংহ প্রধানতঃ জেব্রার প্রধান শত্রু। তাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য জেব্রা তাদের গায়ে দাগ থাকার জন্য নিজেদের লুকিয়ে রাখতে পারে। অন্য মতানুযায়ী, যখন দলবদ্ধ হয়ে জেব্রারা একজায়গায় থাকে, তখন তাদের সকলের গায়ে ঐ একইরকম কালো দাগ থাকার ফলে একপ্রকার বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় এবং শিকারী কোনো বন্য জন্তু তাদের শিকারকে ঠিকমতো চিহ্নিত করতে পারে না। জেব্রাদের অধিকাংশই আজ প্রায় বিলুপ্ত প্রায়। একসময় Quagga নামক এক প্রজাতির অস্তিত্ব ছিল, যাদের শুধুমাত্র মাথায় ডোরাকাটা দাগ থাকত। কিন্তু নির্মমভাবে সেই প্রজাতিটি শিকার হওয়ার ফলে, ঐ প্রজাতিটি 1880 সালে সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায়। জেব্রা নিরামিষাশী প্রাণি এবং দলবদ্ধ হয়ে বাস করে। এরা সহজে বশ বা পোষ মানে না কিন্তু এরা বেশ লড়াকু মনোভাবসম্পন্ন। জেব্রার গায়ে ডোরাকাটা দাগ থাকার ব্যাপারে একটা প্রশ্ন বা রহস্য আজও সমাধান করা সম্ভব হয় নি। সেটি হল তাদের গায়ের দাগগুলি সাদার উপরে কালো দাগ নাকি কালোর উপরে সাদা দাগ। এ সম্বন্ধেও নানা মতবাদ পাওয়া যায়।
ফুল ভালবাসে সকলেই। বিশেষ করে
সেই ফুল যদি রঙিন হয়। লাল, হলুদ, গোলাপী, বাদামি – কত রকম ফুলই না আমাদের চোখে পড়ে। আসলে
পাপড়ির রঙের জন্যই ফুলের রঙ হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফুলের কুঁড়ি অবস্থা থেকে ফুল ফোটা পর্যন্ত তার রঙের
তেমন পরিবর্তন হয় না। যেমন জবা ফুল, গাঁদা ফুল ইত্যাদি। গোলাপের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, কখনো কখনো
কুঁড়ি অবস্থায় তার পাপড়ির রঙ হালকা থাকে এবং ফুল ফুটলে ধীরে ধীরে সেটি গাঢ় হয়ে পড়ে। স্থলপদ্ম ফুল
রাতে ফোটে, সূর্য ওঠার আগে ভোরে পাপড়িগুলি সাদা থাকে এবং বেলা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সেগুলি প্রথমে
গোলাপি এবং শেষে লাল রঙের হয়ে যায়। এই লাল রঙ সারাদিন থাকে। ফুলের পাপড়ির মধ্যে জ্যান্থোফিল,
ক্যারোটিন এবং অ্যান্থোসায়নিন নামে নানা রঞ্জক পদার্থ (pigments) থাকে। সেজন্যই পাপড়ির রঙ হয়। এক
এক রঞ্জক পদার্থের জন্য এক এক রকম রঙ হয়। এইসব রঞ্জক পদার্থের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্থোসায়ানিন
থাকার জন্যই পাপড়ির রঙ ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হয়। অনেক সময়ে একই ধরনের অ্যান্থোসাইয়ানিন পাপড়িগুলিকে
ভিন্ন ভিন্ন রঙে রঙিন করে তোলে। পাপড়ির মধ্যেকার কোষের রসের জন্যই এটা সম্ভব হয়। পাপড়ির কোষরস
যদি অম্ল (acidic) হয়, তবে পাপড়ির রঙ হবে লাল। কিন্তু যদি ঐ রস ক্ষার (alkaline) জাতীয় হয়, তবে
পাপড়ির রঙ হবে বেগুনী, কিন্তু কোনো কোনো সময়ে এর ব্যতিক্রমও দেখা যায়। গোলাপ বা স্থলপদ্ম ফুলের
পাপড়ির লাল রঙ হয়, সায়ানিন (cyanin) নামক এক ধরনের অ্যান্থোসায়ানিনের উপস্থিতির জন্য। স্থলপদ্ম ফুল
রাত্রে ফোটে বলে, তার পাপড়ির রঙ সাদা থাকে প্রথমে, কারণ তখনো পর্যন্ত তার পাপড়িকোষে সায়ানিন তৈরি
হয়নি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, রৌদ্রতাপে ঐ ফুলের পাপড়ির মধ্যে সায়ানিন তৈরি হতে শুরু করে এবং ঐ
সায়ানিনের ঘনত্ব যতই বৃদ্ধি পেতে থাকে বেলা বাড়ার সঙ্গে, ততই পাপড়ির রঙ সাদা থেকে গোলাপী এবং পরে
গোলাপী থেকে লাল রঙ হয়ে যায়। একবার সম্পূর্ণরূপে সায়ানিন তৈরি হয়ে গেলে, সায়ানিন পাপড়ির মধ্যে থেকে
যায় বলে, স্থলপদ্ম ফুলটি সারাদিন লাল রঙেরই হয়ে থাকে, এমনকি সূর্য অস্তাচলে গেলেও পাপড়ি রঙ আর সাদা
হয় না। এই হল কোনো কোনো ফুলের পাপড়ির রঙ বদলানোর রহস্য।
দৈনিন্দিন জীবনে আমাদের সকলেরই
অভিজ্ঞতা যে, আমাদের শরীরে মাথার চুল যেভাবে বৃদ্ধি পায়, শরীরের অপরাপর অংশ – যেমন গায়ের লোম বা
চোখের পাতার সেই হারে বৃদ্ধি পায় না। কিন্তু কেন এই বৃদ্ধির হারের তারতম্য? আসলে আমাদের শরীরের
বিভিন্ন অংশে যে চুলজাতীয় জিনিস গজিয়ে ওঠে, সেগুলির পৃথক পৃথক বৈশিষ্ট্য আছে। আমাদের মাথার চুলের
বৃদ্ধির হার অপেক্ষাকৃত ভাবে অনেক বেশি কিন্তু ত্বকের বা চোখের পাতার বৃদ্ধির হার সেই তুলনায় অনেক কম।
প্রকৃতপক্ষে, আমাদের চোখের পাতার উপর যে চুল আছে – যাকে বলা হয় eyelash – সেগুলি আমাদের
অজান্তেই নিয়মিতভাবে পড়ে যায় এবং সেই জায়গায় আবার নতুন চুল গজিয়ে ওঠে। এই ঘটনাটি আমাদের
অজান্তেই নিয়মিতভাবে ঘটে যায় এবং
আমাদের সকলের সাধারণ এক অভিজ্ঞতা যে,
আমরা প্রায়শঃই দেখি যে, বাদুড় নামক প্রাণিটি গাছের ডালে বা তারে ঝুলন্ত অবস্থায় যখন থাকে তখন তারা
সাধারণতঃ উল্টোভাবে ঝুলে থাকে। কিন্তু একথা আমরা কখনো ভেবে দেখেছি কি যে, বাদুড় সবসময়ে ঝুলে
থাকে কেন এবং তাও সবসময়ে উল্টোভাবে ঝুলে থাকে কেন? আসলে বাদুড়কে আমরা পাখি বলে মনে
করলেও, বাদুড় প্রকৃতপক্ষে একপ্রকার স্তন্যপায়ী প্রাণি(mammals)। তবে তারা উড়তে পারে। যা সাধারণতঃ
অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণিরা পারে না। অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণিদের অধিকাংশই উড়তে ও পারে আবার হাঁটতে বা
চলতে পারে। কিন্তু বাদুড় উড়তে পারলেও হাঁটতে পারে না বা পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারে না।
বিবর্তনবাদের সূত্রে বাদুড়ের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এমনভাবে গঠিত হয়েছে যে, তারা দাঁড়াতে বা চলতে না পারলেও,
বাতাসে তারা থাকতে পারে। যখন বাদুড় উড়ে না এবং স্থির অবস্থায় থাকে, তখন তাদের সাম্যাবস্থা বজায় রাখার
সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় হল ঝুলে থাকা এবং মাথা নীচের দিকে করে রাখলে, তাদের সাম্যাবস্থা অনেক বেশি স্থিতিশীল
(stable) হয়। গাছের ডালে অথবা তারে তাদের পা দুইটিকে আটকে রেখে তারা নিচের দিকে মাথা করে, বেশ
নিশিন্তে ঝুলে থাকতে পারে। আর পায়ের সাহায্যে গাছের ডাল অথবা তারটিকে আঁকড়ে ধরে নিশ্চিন্তে ঝুলে
থাকতে পারে। আর পায়ের সাহায্যে গাছের ডাল অথবা তারটিকে আঁকড়ে ধরে নিশ্চিন্তে ঝুলে থাকতে পারার জন্য
বাদুড়ের পায়ের নখ বিশেষভাবে গঠিত হয়েছে, যার সাহায্যে তারা বেশ সহজে, অনায়াসে এবং আরামে গাছের
ডাল বা তারটিকে ভালভাবে আঁকড়ে ধরে থাকতে পারে। এই হল বাদুড়ের উল্টোভাবে ঝুলে থাকার রহস্যের
কথা।
বাতাসের ওজন আছে আর
সেজন্য বাতাসের চাপও আছে। এই চাপকেই বায়ুচাপ (atmospheric pressure) বলে। সমুদ্রপৃষ্ঠে বা
ভূপৃষ্ঠে বায়ুর চাপ সর্বাপেক্ষা বেশি কারণ ভূপৃষ্ঠের উপরে বায়ুর সবকটি স্তরই বর্তমান থাকে। ভূপৃষ্ঠ থেকে যতই
উপরে দিকে উঠা যায়, ততই বায়ুস্তর হাল্কা হতে থাকে এবং তার ওজনও কমতে থাকে। ফলে, ভূপৃষ্ঠ থেকে যতই
উপরদিকে উঠা যায়, বায়ুর চাপ ততই হ্রাস পেতে থাকে। দেখা গিয়েছে যে, সকল পর্বতারোহীরাই যখন
পর্বতচূড়ার দিকে যাওয়ার জন্য পর্বতারোহণ করেন, তখন তাঁরা সবসময়ে সঙ্গে অক্সিজেন গ্যাসের সিলিন্ডার বহন
করে নিয়ে যান। কিন্তু কেন? ভূ-পৃষ্ঠে বায়ুর চাপের পরিমাণ ধরা হয় মোটামুটি ১০০০ মিলিবার(১
অ্যাটমস্ফিয়ার)। সমুদ্রতল থেকে যতই উপরে উঠা যায়, বায়ুস্তরের গভীরতা ততই হ্রাস পেতে থাকে কারণ
উচ্চস্থানে বায়ুকণার উপস্থিতি কম থাকে। সাধারণতঃ প্রতি ৯০০ ফুট উচ্চতার জন্য ১ ইঞ্চি বা প্রতি ২০০ মিটার
উচ্চতার জন্য ৩৪ মিলিবার বায়ুরচাপ হ্রাস পায়। পর্বতের উঁচুস্থানে সেজন্য বায়ুচাপ যথেষ্ট কম। আমাদের
শরীরে সর্বক্ষণ চারিপাশের বায়ুচাপ প্রদান করে, যা সর্বদিকে সমান থাকার জন্য আমরা সেটা অনুভব করতে পারি
না। কিন্তু পর্বতের উপরে উঠলে, সেখানে বায়ুচাপ কম হওয়াতে, বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকে আর
সেজন্য সেখানে শ্বাসপ্রশ্বাসের কাজে যাতে কোনোরকম অসুবিধা না হয়, সেজন্যই পর্বতারোহীরা পর্বতারোহণের
সময়ে, সঙ্গে করে অক্সিজেনের সিলিন্ডার বহন করে নিয়ে যান। উচ্চস্থানে বায়ুর চাপ কম উপস্থিতি বা
অক্সিজেনের অভাব দূর করার জন্যই পর্বতারোহীরা অক্সিজেনে সিলিন্ডার ব্যবহার করে থাকেন।
আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা এই যে, সমুদ্রের
জল সবসময়েই বেশ লবণাক্ত। সমুদ্রজলে যথেষ্ট পরিমাণ লবণের উপস্থিতিই এই লবণাক্ত হওয়ার কারণ। কিন্তু
পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, মেরু অঞ্চলে যে সমুদ্র আছে, সেখানে সমুদ্রের জলে লবণের পরিমাণ যথেষ্ট কম বা
সেখানে জলের লবণাক্ত ভাব অপেক্ষাকৃত অনেক কম। কিন্তু কেন এমন হয়? দেখা গিয়েছে যে,
তুলনামূলকভাবে নিরক্ষীয় অঞ্চল অপেক্ষা মেরু অঞ্চলে সমুদ্রের জলে লবণতার পরিমাণ কম। লবণাক্তের পরিমাণ
সর্বাপেক্ষা বেশি অনুভূত হয় ক্রান্তীয় অঞ্চলে (tropical region)।
মেরু অঞ্চলের অক্ষাংশ অনেক বেশি সেজন্য সূর্যরশ্মি সেখানে অত্যন্ত তির্যকভাবে পড়ে। আর এই তির্যক সূর্যরশ্মির
জন্য সেই অঞ্চলে সমুদ্রজলের বাষ্পীভবনের হার যথেষ্ট কম। সেজন্য সেখানের জলে লবণাক্তভাবও অনেক কম।
এছাড়া, মেরু অঞ্চলে নদীবাহিত বরফগলা জল সমুদ্রে এসে মিশে যায় বলে, সমুদ্র জলের লবণতার ভাগ কমায়।
আবার, মেরু অঞ্চলে হিমবাহ-বাহিত বরফের জল মেরু-সমুদ্রে এসে মিশে যায়, ফলে সেই সমুদ্রজলের লবণাক্ত
ভাব বৃদ্ধি পায় না। এই সকল কারণেই সমুদ্রজলের লবণতা মেরু অঞ্চলে তুলনামূলকভাবে অনেক কম। পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, মেরু অঞ্চলে সমুদ্রজলের লবণতার পরিমাণ শতকরা ৩ ভাগ (৩%) থেকে শতকরা
১৫ ভাগের (১৫%) মধ্যে থাকে। কিন্তু ক্রান্তীয় বা নিরক্ষীয় অঞ্চলে এই পরিমাণ শতকরা ২০ ভাগ থেকে ৩০ ভাগ
পর্যন্ত হতে পারে।
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
মানুষ ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্ন দেখে। প্রতি মানুষ প্রতি রাত্রে অন্ততঃ দুই বা তিনবার স্বপ্ন দেখে। যারা বলেন যে, স্বপ্ন দেখেন না, তাঁরা সম্ভবতঃ ঘুম থেকে জেগে ওঠার পরে স্বপ্নের কথা কিছুই মনে করতে পারেন না। অনেকে আবার স্বপ্নের কথা বিশদভাবে মনে করতে পারেন। স্বপ্ন কখনো সুখের, কখনো ভয়ংকর। আবার কখনো রোমাঞ্চকর, কখনো বা আতঙ্কের বা সুপ্ত কামনার বা ইচ্ছার। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মানুষের মনের অপূর্ণ ইচ্ছা বা কামনাই মানুষ স্বপ্নমাধ্যমে পরিপূর্ণ করে। স্বপ্ন প্রকৃতপক্ষে মানুষের মনের অবদমিত ইচ্ছা বা কামনার প্রকাশ ব্যবস্থা। স্বপ্ন দেখার সময়ে ঘুমন্ত অবস্থায় মানুষের চোখ খুব দ্রুত নড়াচড়া করতে থাকে। এই নড়াচড়া অবস্থা প্রায় পনেরো বা কুড়ি মিনিট ব্যাপী স্থায়ী হয়। এই সময়ে মস্তিষ্কের তরঙ্গ প্রকৃতিও (Brain waves) পরিবর্তিত হতে থাকে, যা এক বিশেষ ব্যবস্থায় রেকর্ড করা যায়। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, মানুষের মনের যে সমস্ত ইচ্ছা বা কামনা অপরিপূর্ণ থাকে, স্বপ্ন হল সেই সব অবদমিত ইচ্ছার প্রকাশ। তাঁদের মতে, মানুষ স্বপ্ন দেখে তার মস্তিষ্কের সব স্মৃতি পরিষ্কার করে নিয়ে, পরবর্তী দিনের কাজের জন্য প্রস্তুত হয়। বহুক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে, বহু সমস্যার সমাধানসূত্র পাওয়া গিয়েছে স্বপ্নের মাধ্যমে। বহু বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার সাধিত হয়েছে স্বপ্নের মাধ্যমে। পরমাণুর গঠনতত্ত্ব বা বেঞ্জিনের গঠন প্রকৃতি, সেলাই মেশিনের সূচ ইত্যাদি নানা গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে স্বপ্নের মাধ্যমে। আবার বহু প্রসিদ্ধ কাব্য বা গল্প রচিত হয়েছে স্বপ্নে দেখা সূত্র থেকে। সঙ্গীতের ক্ষেত্রেও বহু প্রখ্যাত সঙ্গীত সুর সৃষ্টি হয়েছে স্বপ্নমাধ্যমে। স্বপ্ন দেখার সঠিক ব্যাখ্যা এখনো পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা দিতে সমর্থ হননি। তবে একথা সত্য যে, মানুষ স্বপ্ন দেখে বলে, তার মনের বহু অবদমিত আশা-আকাঙ্ক্ষা বা ইচ্ছা প্রকাশ পাওয়ার সুযোগ পায়। সেজন্য স্বপ্ন দেখা শরীর ও স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল। এরকমও শোনা যায় যে, স্বপ্ন মাধ্যমে মানুষ অনেক সময়ে অনাগত ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে ধারণা করতে পেরেছে। অবশ্য এরকম ঘটে হয়তো সেই সম্বন্ধে তার মনে কাল্পনিক ভাবনাচিন্তার জন্যই, সে অগ্রিম সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বপ্ন দেখেছে। পরিশেষে বলা যায় যে, স্বপ্ন দেখার মধ্যে অবশ্যই বেশ এক ধরনের রোমাঞ্চ আছে।
ডিম সাধারণতঃ আমাদের এক অতিপ্রিয় খাদ্যদ্রব্য। এই ডিম দেখা যায় যে, যখন এমনি থাকে, তখন তার ভিতরকার পদার্থটি তরল অবস্থায় থাকে কিন্তু সেই ডিমই যখন সিদ্ধ করা হয়, তখন তার ভিতরকার অংশটি পুরোপুরি ভাবে শক্ত ও কঠিন হয়ে যায়। কিন্তু সিদ্ধ ডিম শক্ত হয় কেন? ডিম যখন সাধারণ উষ্ণ তায় থাকে, তখন তার ভিতরকার অংশ সাদা অ্যালবুমিন (albumin) এবং হলুদরঙের কুসুম (yolk) তরল অবস্থায় থাকে। ডিমের ভিতর প্রায় তিন-চতুর্থাংশ জলীয় পদার্থ যার ভিতর ঐ অ্যালবুমিন এবং কুসুম ভেসে থাকে। কিন্তু ডিম গরম জলে সিদ্ধ হলে, সেটি তার ভিতরকার অংশসমেত বেশ শক্ত আকার ধারণ করে। যখন ডিম সাধারণ উষ্ণতায় থাকে, তখন ঐ অ্যালবুমিনস্থ প্রোটিন এবং ফ্যাট তরল আকারে ভেসে থাকে। ঘরের সাধারণ উষ্ণতায়, ঐ প্রোটিন একটি ত্রি-মাত্রিক জটিল আকারে পরস্পরের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে। যেহেতু এইভাবে জড়িয়ে থাকা প্রোটিনগুলি সহজেই চলাফেরা করতে পারে, সেজন্য ঐ অ্যালবুমিন ও কুসুম অংশ তখন তরল আকারে থাকে। কিন্তু যখন ঐ ডিমটিকে গরম জলে সিদ্ধ করার জন্য দেওয়া হয়, তখন ঐ প্রোটিনগুলি, যা সাধারণতঃ ভাঁজ অবস্থায় থাকে, সেগুলি উষ্ণতাবৃদ্ধির জন্য বাহিরে প্রকাশিত হয়ে পড়ে। যখন উষ্ণতা ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পৌঁছায়, তখন প্রোটিন কণাগুলির প্রান্তিক বিন্দুগুলি পরস্পরের সঙ্গে সেতুর মতো জুড়ে যায় এবং তারা সম্মিলিতভাবে একটি একক বৃহৎ আকার ধারণ করে। এই ভাবে গঠিত বিশাল আকারের বস্তুগুলি (bonds) প্রোটিনঅণুগুলিকে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে করতে দেয় না এবং তখন ডিমের ভিতরকার সমগ্র অংশটাই এক কঠিন আকারের বস্তুতে রূপান্তরিত হয় এবং এই কাঠিন্য চিরস্থায়ী হয়। এই কারণেই ডিম সিদ্ধ হওয়ার পরে সেটি শক্ত হয়ে যায়।
উদ্ভিদজগতে এমন কিছু গাছ দেখা যায়, যারা নিজেরাই শিকারীর মতো পতঙ্গভুক হয়। যেমন কলসপত্রীগাছ বা সূর্যশিশির গাছ। সবুজগাছ নিজেরাই খাদ্য তৈরি করতে পারে বলে, তাদের বলা হয় স্বভোজী (autotrops)। তারা সূর্যালোকের উপস্থিতিতে ক্লোরোফিলযুক্ত কোষে জল এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সাহায্যে সালোকসংশ্লেষ পদ্ধতিতে শর্করা জাতীয় খাদ্য তৈরি করে। শুধু শর্করা জাতীয় খাদ্য হলেই চলে না, ফুল-ফল ইত্যাদি সৃষ্টির জন্য প্রোটিন জাতীয় খাদ্যেরও প্রয়োজন। সেজন্য প্রয়োজন নাইট্রোজেনের। গাছ মাটি থেকে নাইট্রোজেন যৌগ, খনিজলবণ, জল ইত্যাদি সংগ্রহ করে থাকে। মাটিতে কোনো খনিজ লবণের অভাব ঘটলে, গাছের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়। মাটি থেকে নাইট্রোজেন যৌগ নিয়ে গাছ নিজেই প্রোটিন তৈরি করে। এই প্রোটিন প্লোটোপ্লাজম গঠনে কাজে লাগে। পতঙ্গভুক উদ্ভিদগুলি সাধারণতঃ এমন মাটিতে জন্মায় যে, যেখানে খনিজ লবণের উপস্থিতি খুবই অল্প। যেমন পাথুরে শুষ্ক মাটি। এই ধরণের মাটিতে নাইট্রোজেন কম থাকে। তাছাড়া, এই সব পতঙ্গভুক গাছেদের (কলসপত্রী বা সূর্যশিশির ইত্যাদি) শিকড়ও খুব বেশি দীর্ঘ হয় না। ফলে, শিকড় মাটির বেশি গভীরে প্রবেশ করতে পারে না এবং বেশিদূর ছড়িয়ে পড়তে পারে না। সেজন্য, এদের শিকড় তেমনভাবে খনিজলবণ বা নাইট্রোজেন লবণ সংগ্রহ করতে পারে না। এই অভাব মেটানোর জন্য এই ধরনের গাছেরা একটি উপায় অবলম্বন করে। এই জাতীয় গাছের পাতা নানাভাবে পরিবর্তিত হয়ে এক ধরনের ফাঁদ সৃষ্টি করে। কলসপত্রী গাছের পাতা ঢাকনাযুক্ত কলসির মতো হয়। পতঙ্গেরা এই কলসীর ভিতর পড়লেই, পাতাটি আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যায়। কলসপত্রী থেকে জারকরস বের হয়ে আসে এবং পতঙ্গটিকে মেরে ফেলে। অবশেষে পতঙ্গটির দেহের প্রোটিনকে পাচন করে। পুষ্টিরস শোষণের পরে, মৃত পতঙ্গটি বাহিরে নিক্ষিপ্ত হয়। সুতরাং এক একথায় বলা যায় যে, মূলতঃ প্রোটিন তৈরির অন্যতম উপাদান নাইট্রোজেন যৌগ পাওয়ার জন্যই কোনো কোনো গাছ বা উদ্ভিদ পতঙ্গভুক হয়।
Under Construction