অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়
১। আমার বাবার মতো আমি দেখতে কেন?
৩। পুরানো কাগজ মড়মড়ে ও হলুদ হয়ে যায়?
৪। সব প্রাণিরই ঘুমের প্রয়োজন কেন?
৫। চিনাবাদাম মাটির নীচে হয় কেন?
৬। আকাশে তারারা মিটমিট করে কেন?
১০। পাকস্থলী নিজেকে হজম করে না কেন?
১১। শরীরে চুল বা নখ কাটলে ব্যথা লাগে না কেন?
১২। পৃথিবীর সর্বত্র একই সময়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয় না কেন?
১৫। জাপানকে উদীয়মান সূর্যের দেশ বলে কেন?
১৮। ডোরাকাটা দাগ জেব্রার গায়ে থাকে কেন?
১৯। কোনো কোনো ফুলের পাপড়ির রঙ বদলায় কেন?
২০। আমাদের চোখের পাতার বৃদ্ধি হয় না কেন?
২১। বাদুড় উল্টাভাবে ঝুলে থাকে কেন?
২২। পর্বত আরোহীরা অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করে কেন?
২৩। সমুদ্রজলের লবণতা মেরু অঞ্চলে কম কেন
২৪। গাছ তার ছাল ( বাকল ) মোচন করে কেন
২৫। জীবজন্তু লেজবিশিষ্ট হয় কেন?
২৬। বরফের দেশে চোখে গগলস্ পরে কেন
২৭। মেরু অঞ্চলে রাত্রি গাঢ় ও গভীর হয় না কেন?
২৮। পেঁয়াজ কাটার সময়ে চোখে জল আসে কেন?
২৯। মঙ্গলগ্রহের রং লাল দেখায় কেন?
৩০। পাখির মতো মানুষ উড়তে পারে না কেন?
৩১। বেত সরু হলে আঘাত বেশি লাগে কেন?
৩২। কাঁচা আম টক কিন্তু পাকলে মিষ্টি কেন?
৩৩। পৃথিবীর মেরু অঞ্চল দুটি চাপা কেন?
৩৪। মৃতদেহ জলের উপর ভেসে থাকে কেন?
৩৫। অতিরিক্ত আহারের পরে ঘুম পায় কেন?
৩৬। কাঁচা বেল পাকা বেল অপেক্ষা বেশি উপকারী কেন?
৩৭। লেজবিশিষ্ট ঘুড়ি উড়ানো সহজ কেন?
৩৯। মাকড়সা নিজের জালে জড়ায় না কেন?
৪০। ধানগাছ জলের মধ্যে ডুবে যায় না কেন?
৪২। নরওয়ে নিশীথ সূর্যের দেশ নামে খ্যাত কেন?
৪৪। কাঠঠোক্রা পাখি গাছ ঠোক্রায় কেন?
৪৫। অস্তিত্ব সত্ত্বেও বহু নক্ষত্রকে পৃথিবী থেকে দেখা যায় না কেন?
৪৬। আদার স্বাদ মুখে ঝাল লাগে কেন?
৪৭। বারমুদা ত্রিভুজকে রহস্যময় বলা হয় কেন?
৪৮। শীতকালে আকাশে ঘন কুয়াশা হয় কেন?
৪৯। জলে নুন দ্রবীভূত হয় কিন্তু তেলে নয় কেন?
৫০। কালো বিড়ালকে অশুভের প্রতীক মনে করা হয় কেন?
৫১। ফল পাকার পরে নরম লাগে কেন?
৫২। সমুদ্রের জল উপচে পড়ে না কেন?
৫৩। কোয়ার্টজ ঘড়ির সেকেন্ডের কাঁটা লাফিয়ে চলে কেন?
৫৫। সমুদ্রের তীরের কাছে ঢেউ উঁচু হয় কেন?
৫৬। তিমি মাছ হিসাবে গণ্য হয় না কেন?
৫৮। আলোর দিকে পতঙ্গেরা আকর্ষিত হয় কেন?
৬১। চোখ বন্ধ রেখে সোজা হাঁটা যায় না কেন?
৬২। সূর্যালোকে গাছের পাতা গরম হয় না কেন?
৬৩। লবন আয়োডিনযুক্ত করা হয় না কেন?
৬৪। নৌ-জাহাজের গতি 'নট্'-এ মাপা হয় কেন?
৬৫। পাখিরা মানুষের মতো কথা বলতে পারে না কেন?
৬৬। বিভিন্ন মানুষের গায়ের রং ভিন্ন ভিন্ন হয় কেন?
৬৭। কুকুরের ঘ্রাণশক্তি মানুষের থেকে বেশি কেন?
৬৮। ধান সিদ্ধ করে সিদ্ধ চাল তোইরি করা হয় কেন?
৭০। সূর্যমুখী ফুল সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে?
৭১। পয়লা এপ্রিল দিনটিকে 'বোকার দিন' বলে কেন?
৭২। অশ্বারোহীরা অশ্বের বামদিক থেকে আরোহণ করে কেন?
৭৩। স্কেটিং করা বরফের উপর সহজ হয় কেন?
৭৪। রাত্রে ফোটা ফুল বর্ণহীন হয় কেন?
৭৫। বিভিন্ন মানুষের রক্তের শ্রেণি বিভিন্ন হয় কেন?
৭৬। কর্পূর উদ্বায়ী (উবে যায়) কেন?
৭৮। মানুষের চোখ পিটপিট করে কেন?
৭৯। আমাদের চলার সাথে আকাশের চাঁদও চলছে বলে মনে হয় কেন?
৮২। মস্তিষ্কের আঘাত অধিক মারাত্মক হয় কেন?
৮৪। খরগোশের লম্বা কান থাকে কেন?
৮৫। আইসক্রিম বরফের চেয়ে নরম কেন?
৮৬। সমুদ্রকে রত্নাকর বলা হয় কেন?
৮৭। মাটির কলসীতে জল ঠান্ডা হয় কেন?
৯১। কিছু লতা-উদ্ভিদ সাপের মতো বাঁক নিয়ে উঠে কেন?
৯২। অন্ধকার ঘরে টেলিভিসন দেখা উচিত নয় কেন?
৯৩। লজ্জাবতী লতার পাতা স্পর্শে কুঞ্চিত হয় কেন?
৯৪। পাত্রে জল ভরার সময়ে শব্দের ক্রমাগত পরিবর্তন হয় কেন?
৯৫। চা-পানে অবসাদগ্রস্ত শরীর ও মন চাঙ্গা হয় কেন?
৯৬। মাথায় বা চোখে আঘাত লাগলে তারকামন্ডলী দেখা যায় কেন?
৯৯। কোনো কোনো উদ্ভিদ পতঙ্গভুক্ হয় কেন?
১০০। 'তেরো'- সংখ্যা অশুভ বিবেচিত হয় কেন?
আমরা সকলেই জানি যে, জামগাছে কখনো লেবু ধরে না বা আমগাছে পেয়ারা। একটি বিড়াল জন্মালে, সেটি ঠিক বিড়ালের মতই দেখতে হয়। একইভাবে একটি শিশু জন্মালে, সেটি ঠিক তার বাবা-মায়ের মতই দেখতে হয়। একথাটি সর্বস্বীকৃত যে, সব জীবিত প্রাণিদের বাচ্চাদের সঙ্গে তাদের মাতাপিতার সাদৃশ্য বর্তমান। কিন্তু কেন এমন হয়?
এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় প্রজনন শাস্ত্রের (genetics) বংশানুগতি বিজ্ঞান (heredity) science) শাখা থেকে। বিজ্ঞানের এই শাখাতে পিতামাতার সঙ্গে তাদের সন্তানদের সাদৃশ্যের কারণ সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়ে থাকে। এই শাস্ত্র থেকেই জানা যায় যে, পিতামাতার কোন্ কোন্ লক্ষণ বা বৈশিষ্ট্য তাদের সন্তানদের মধ্যে দেখতে পাওয়া যাবে।
পিতামাতার বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণাদি সন্তানের মধ্যে অনুপ্রবিষ্ট হওয়ার আর এক নাম 'বংশানুগতি' (heredity)। পিতামাতার শরীর থেকে 'জিন' (gene) নামক এক অতি ক্ষুদ্র কণার মাধ্যমে এই লক্ষণগুলি সন্তানের শরীরে দেখা যায়, যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় 'inheritance'। জিন আসলে কোষেরই একটি ক্ষুদ্র অংশ। প্রতিটি কোষের কেন্দ্রে (nucleus) থাকে প্রায় 22000 টি জিন, যার মধ্যে 11000 টি জিন পিতার শরীর থেকে এবং 11000 টি জিন মাতার শরীর থেকে, সন্তানের শরীরে বংশানুসরিত হয়। মানুষের ক্ষেত্রে এই জিনগুলি মোট 46 টি ক্রোমোসোমের মধ্যে থাকে। এই 46 টি ক্রোমোসোম থাকে কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াসের মধ্যে। সন্তান যখন মাতৃগর্ভে আসে, তখন 23 টি ক্রোমোসোম বাবার শরীর থেকে এবং 23 টি ক্রোমোসোম মায়ের শরীর থেকে সন্তানের শরীরে আসে। ফলে, শিশুভ্রূণের প্রতিটি কোষে থাকে 23 জোড়া ক্রোমোসোম। এই জিনই হল বংশানুগতির একক (unit)। প্রতিটি প্রাণি বা গাছপালার ক্ষেত্রেই জিনের অর্ধাংশ আসে পুরুষ-শ্রেণি থেকে আর বাকি অর্ধাংশ স্ত্রী-শ্রেণি থেকে।
গ্রেগরি মেন্ডেল নাম এক অস্ট্রিয়ান ধর্মযাজককে এই প্রজনন শাস্ত্রের জনক বলা হয়। মটরগাছ নিয়ে তিনি অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন এবং বংশধারা সম্বন্ধে বেশ কিছু নিয়মাবলী দিয়েছিলেন। সেগুলি 'মেল্ডেলের সূত্র' নামে পরিচিত। তিনি পরীক্ষার সাহায্যে প্রমাণ করেন যে, পিতা এবং মাতার শরীরের যে জিনগুলি বেশি প্রভাবশালী, সেগুলিই সন্তানের শরীরের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে। যেমন যদি বাবা-মায়ের দুজনার চোখের রং নীল হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে সন্তানের চোখের রং ও নীল হবে। আবার, বাবার চোখের রং যদি কালো এবং মায়ের চোখের রং বাদামি হয়, তাহলে সন্তানের চোখের রং হবে বাদামি কারণ কালো রং -এর উপর বাদামী রং-এর একটা প্রাধান্য আছে। এজন্যই লম্বা বাবার সন্তান লম্বা এবং বেঁটে বাবার সন্তান বেঁটে হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পিতার জিনগুলি মাতার জিন অপেক্ষা বেশি প্রভাবশালী হয়। আর সেজন্যই, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, সন্তানরা সাধারণতঃ তাদের বাবার মতই দেখতে হয় - বিশেষ ভাবে পুত্রসন্তানরা। আর ঠিক একইভাবে, এই কারণেই আমরা আমাদের বাবার মতো দেখতে।
শীতের বিদায়ক্ষণে ফাল্গুন মাসে গাছের পাতা ঝরে পড়ার দৃশ্য খুবই পরিচিত আমাদের কাছে। কিছু গাছ আছে, যাদের পাতা বছরে একবার ঝরে পড়ে, তাদের 'পর্ণমোচী বৃক্ষ' (deciduous tree) বলে। আবার কিছু গাছ আছে যাদের সবসময়েই সবুজ পাতা থাকে। তাদের বলা হয় 'চিরহরিৎ বৃক্ষ' (evergreen tree)। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, গাছের এই পাতা ঝরার ব্যাপারটি শুধুমাত্র শীতকালেই হয় না, সারা বছরেই গাছের পাতা কিছু না কিছু ঝরে পড়ে। অবশ্য শীতকালেই এই ঘটনাটি আমাদের কাছে খুব প্রকট হয়ে ওঠে।
কিন্তু গাছের পাতা কেন ঝরে? বিজ্ঞানীরা এই ব্যাপারে অনেক গবেষণা করেছেন। কারো কারো মতে, পাতার বৃন্ত মুখে সূক্ষ্ম এক ধরনের কোষের উদ্ভব হওয়াতেই এই ঘটনাটি ঘটে। কিন্তু এই যুক্তি সর্বজনগ্রাহ্য নয়। অনেকে আবার ভাবেন যে, যেহেতু শীতকালেই পাতা বেশি ঝরে পড়ে, সেজন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সূর্যালোকের অভাবই পাতা ঝরে পড়ার কারণ। কিন্তু এই যুক্তিও ঠিক নয়। দেখা গিয়েছে যে, পাতার ফলকটি যদি কেটে ফেলে দেওয়া হয়, তাহলে পাতাটি খুব শীঘ্র পড়ে যায়। কিন্তু পাতার ফলকটি আংশিকভাবে ছেঁটে দিলে, পাতাটি বেশ ভালোভাবেই বেঁচে থাকে। সুতরাং পাতার ফলকে এমন একটি বস্তু থাকে, যেটি পাতা ঝরাকে প্রতিরোধ করে। বস্তুতঃ ফলকে 'অক্সিন' নামে এক ধরনের হরমোন থাকে, যা পাতা ঝরাকে প্রতিরোধ করে। ফলকে যত বেশি অক্সিন তৈরি হবে, পাতা তত বেশি স্থায়ী হবে। কচিপাতার ক্ষেত্রে এই অক্সিনের হার খুব বেশি। পাতার মাপ যখন 6-10 সেমি-এর মধ্যে থাকে, তখন এই হার থাকে সবচেয়ে বেশি। মজার কথা যে, দেখা গিয়েছে যে গাছের সমস্ত পাতার ফলক যদি ছেঁটে ফেলা হয়, তাহলেও পাতা ঝরে পড়ার প্রবণতা কমে যায়। এক্ষেত্রে, পাতার কোষের মধ্যে 'ইথিলিন' নামক এক রাসায়নিক পদার্থ এই কাজটি সম্পন্ন করে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, এই অক্সিন নামক হরমোনটি পাতা ঝরে পড়ার সহায়ক ও যেমন, প্রতিরোধকও তেমন। পাতার কোরকের মধ্যে উৎপন্ন অক্সিনের পরিমাণের উপরও নির্ভর করে পাতা ঝরে পড়ার ব্যাপারটি। এই ঘটনাটিকে 'অক্সিন-অক্সিন সাম্য' বলা হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত পুরানো পাতার ফলকে উৎপন্ন অক্সিন কচি অগ্রস্থ কোরকে উৎপন্ন অক্সিনের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে, ততক্ষণ পর্যন্ত পাতার জীবন স্থায়ী থাকে। চিরহরিৎ বৃক্ষদের ক্ষেত্রে পাতা ঝরার ব্যাপারটি আংশিকভাবে সারা বছরব্যাপী চলতে থাকে বলেই আপাতদৃষ্টিতে সেই গাছগুলিকে চিরহরিৎ বলে আমাদের মনে হয়।
Under Construction
মানুষ থেকে শুরু করে সব প্রাণিদেরই ঘুমের প্রয়োজন। দিনে বা রাত্রে কোনো না কোনো সময়ে সব প্রাণিরই ঘুমের জন্য কিছুটা সময় ব্যয় হয়। আসলে ঘুম প্রতিটি প্রাণিরই একটি সহজাত প্রবৃত্তি। সাধারণতঃ প্রতিটি মানুষ গড়ে দিনে আট ঘন্টা ঘুমের জন্য ব্যয় করে। অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি যদি মোট 72 বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকেন, তবে তাঁর জীবনের প্রায় 24 বছর তিনি ঘুমিয়ে কাটিয়েছেন। ব্যাপারটি যদিও কিছুটা অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়, তবুও প্রায় সত্য এ ঘটনাটি।
ঘুম আমাদের শরীরের পক্ষে একান্ত প্রয়োজন। শিশুরা দিনে আরো বেশি সময়ব্যাপী ঘুমায়। আবার বয়স্ক ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ঘুমের পরিমাণ কম। ঘুমানো এবং জেগে থাকা - এই চক্রটি একটি জৈবিক-চক্র (biological clock) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যেটি সাধারণতঃ দিবা-রাত্র চক্র দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। মানুষ যেমন শুয়ে (শয়ন) ঘুমায়, তেমন কোনো কোনো প্রাণি বসে বসেই ঘুমায় (যেমন পাখিরা)। আবার কোনো কোনো প্রাণি দাঁড়িয়ে ঘুমায় (যেমন ঘোড়া)। কিন্তু ঘুম সব প্রাণিরই প্রয়োজন - তা সেটা যেভাবেই হোক না কেন। মানুষ যতই ব্যস্ত বা কর্মবহুল জীবনযাপন করুক না কেন, ঘুম অবশ্যই তার একান্ত প্রয়োজন। কথিত আছে যে, নেপোলিয়ন নাকি ঘোড়ার পিঠে বসেই কিছুটা ঘুমিয়ে নিতেন।
কিন্তু প্রশ্ন যে, এই ঘুমের প্রয়োজন কেন? ঘুম আমাদের শরীর ও মনকে চাঙ্গা করে তোলে। দীর্ঘ ক্লান্ত ও অবসাদের পরে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কিছুটা বিশ্রাম চায়। ঘুমের মাধ্যমেই সেই অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলি কিছুটা বিশ্রাম পায়। ঘুমের অভাবে শরীরের যে কি অবস্থা হয়, সে কথা প্রায় সকলেরই জানা। বহুদিন যাবৎ ঠিকমত ঘুম না হলে, মনঃসংযোগের অভাব, খিটখিটে মেজাজ এমনকি কাল্পনিক ভ্রান্তিও (hallucinations) শরীরে আসতে পারে। ঘুমের অভাবে অনেক সময়ে কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়, শরীরে আসে চরম ক্লান্তি এবং স্বাস্থ্যেরও সামগ্রিক অবনতি ঘটে। কয়েক রাত্রি যদি একনাগাড়ে ঠিকমত ঘুম না হয়, তাহলে বহুক্ষেত্রে মানুষের চেহারায় ও মনমেজাজে লক্ষণীয় পরিবর্তন আসতে পারে। এই অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে।
সেজন্য, সুস্থ ও সরল জীবনযাপনের জন্য প্রতিটি প্রাণির প্রত্যহ কিছুটা সময় ঘুমের জন্য অবশ্যই প্রয়োজন। মানুষ যতই ব্যস্ত থাকুক না কেন, সব শ্রেণির মানুষের জন্য ঘুম একান্ত আবশ্যিক প্রয়োজন।
চিনাবাদাম শুধুমাত্র বাচ্চাদের নয়, বড়োদেরও এক অত্যন্ত মুখরোচক খাদ্য। মচমচে চিনাবাদাম খেতে ভালোবাসে না - এমন লোক দেখাই যায় না। আমরা সাধারণতঃ দুই ধরনের বাদামের কথা জানি - কাজুবাদাম এবং চিনাবাদাম। কাজুবাদামের গাছ যদিও যথাস্থানে প্রায়শঃই দেখা যায়, চিনাবাদামের গাছ খুব বেশি একটা আমাদের চোখে সাধারণতঃ পড়ে না। সেজন্যই চিনাবাদাম গাছ সম্বন্ধে আমাদের ধ্যানধারণা কিছুটা কম। অন্যান্য গাছের ফলের মতো চিনেবাদাম গাছের ওপরে হয় না, মাটির নিচে হয়ে থাকে - যদিও চিনাবাদামও গাছের একটি ফল।
চিনেবাদাম গাছ আকারে ছোটো হয় কিন্তু বেশ ঝাঁকড়া ধরনের হয়। গাছের কান্ডের ওপর দিকে অনেক ডালপালা ও লতাপাতা বার হওয়ার জন্যই এরকমটা হয়। কান্ডের ঠিক নীচের দিক থেকে যে পুষ্পমঞ্জরী বার হয়, সেখানেই গাছের ফুল ধরে। এই ফুলগুলি মাটির ঠিক ওপরেই মাটিতে স্পর্শ করে থাকে। এই ফুলের বিশেষত্ব এই যে, এই ফুলগুলি কখনোই ফোটে না। ফুলের ভেতরেই স্ব-পরাগযোগ (self pollination) ঘটে থাকে। সেজন্য, ফুল না ফুটেই তার ভিতরে ফল তৈরি হতে শুরু করে। ফল যখন তৈরি হতে শুরু হয়, তখন ফুলের তলার দিকে অক্সিন নামক একটি হরমোন বেশি পরিমাণে জমে। ফলে সেখানের কোষসংখ্যা খুব দ্রুত বাড়তে থাকে। কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে, ডিম্বাশয়ের তলায় ছোটো একটা ডাঁটির মতো অংশ তৈরি হয় এবং ঐ অংশটি ক্রমশ লম্বায় বাড়তে থাকে। একসময়ে সেটি মাটির তলায় প্রবেশ করে এবং তার সাথেই ফুলেরও অনুপ্রবেশ ঘটে। এইভাবেই চিনাবাদাম ফুল পরাগসংযোগের পরেই মাটির তলায় প্রবেশ করে। মাটির অভ্যন্তরের জল শোষণ করে বাদাম ফল বৃদ্ধি পেতে থাকে। শুকনো মাটির থেকে ভেজা মাটিতে বাদামফলের ফলন বেশি হয় এবং ঐ মাটি থেকেই জলের যোগান পাওয়া যায় বলেই, চিনাবাদাম মাটির নীচে হওয়ার এক অন্যতম কারণ।
মেঘহীন পরিষ্কার রাত্রে আকাশের দিকে তাকালে, আমাদের চোখে পড়ে লক্ষ লক্ষ উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক, যারা মিটমিট করছে বলে মনে হয়। এদেরকে আমরা 'তার' বলি। পৃথিবী থাকে এই তারারা বহুদূরে থাকে। আকাশে মঙ্গল, বুধ, শুক্র প্রভৃতি অন্য গ্রহদেরও দেখা যায় কিন্তু সেই সব গ্রহেরা আমাদের চোখে মিটমিট করছে বলে মনে হয় না। অথচ তারাদের ক্ষেত্রেই শুধু তারা মিটমিট করছে বলে মনে হয় - কিন্তু কেন?
তারাদের মিটমিট করার নেপথ্যে এক বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে। তারাদের থেকে নির্গত কিরণরশ্মি সমান্তরাল ভাবে এসে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ঢোকে এবং এলোমেলো বায়ুস্রোতের মধ্যে পড়ে। উষ্ণতাভেদে বায়ুমন্ডলের স্তরগুলির ঘনত্ব এবং প্রতিসরাঙ্ক (refractive index) ভিন্নমানের হয়, যতই পৃথিবী থেকে উপরে ওঠা যায়, ততই উষ্ণতা কমে এবং বায়ুর স্রোত, পরিবহন ইত্যাদির পরিবর্তন হতে থাকে। ফলে তার মধে দিয়ে আসা রশ্মির পথ এলোমেলোভাবে বদলায়। ফলে আমাদের চোখে পৃথিবী থেকে, এদের ঔজ্জ্বল্য কমা-বাড়া হতে দেখা যায়। ফলে, আমরা তাদের মিটমিট করতে দেখি। আমরা যদি মহাকাশ থেকে (যেখানে বায়ুমন্ডল নেই) তারাদের পর্যবেক্ষণ করি, তাহলে কখনোই তাদের মিটমিট করতে দেখব না। তখন তারারাও সূর্য বা অন্যান্য গ্রহদের মতো স্থির বলে মনে হবে।
আসলে তারাদের তুলনায় সূর্য বা অন্যান্য গ্রহরাজি তুলনামূলকভাবে আমাদের পৃথিবীর অনেক কাছে আছে। এই গ্রহরাজি বা সূর্য, এক একটি উজ্জ্বল আলোক-উৎস (extended source) - বিন্দু উৎস (point source) নয়। সেজন্য তাদের আলোর ঔজ্জ্বল্য অনেক বেশি। তাই তাদের আলো যখন পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের ভিতরে আসে, তখন তাদের ঔজ্জ্বল্যের আপাত হ্রাসবৃদ্ধি প্রায়শই অন্যান্য উৎসের আলোর দ্বারা পরিপূরিত হয়ে যায়, যা সহজে চোখে ধরা পড়ে না পৃথিবী থেকে। তাই তাদেরকে মনে হয় যে, তারা সকলে স্থির জ্যোতিষ্ক।
কিন্তু তারাদের ক্ষেত্রে সেটা হয় না বলেই, এরা আমাদের চোখে মিটমিট করছে বলে মনে হয়।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনের এক বাস্তব অভিজ্ঞতা যে, চিনি বা নুন জাতীয় জিনিস জলের মধ্যে ফেলার সঙ্গে সঙ্গেই সেগুলি গুলে যায় বা দ্রবীভূত হয় কিন্তু তেল, চর্বি বা মোম জাতীয় জৈব পদার্থগুলি জলে দ্রবীভূত হয় না।
কিন্তু কেন এমন হয়?
যেকোনো জিনিসকে দ্রবীভূত করার জন্য জলকেই সাধারণতঃ দ্রবণ হিসাবে বেশি ব্যবহার করা হয়। বিজ্ঞান বলে যে, সমজাতীয় পদার্থ সাধারণতঃ পরস্পরকে দ্রবীভূত করে, অর্থাৎ, যে সমস্ত পদার্থের একই ধরনের অণু থাকে, তারাই শুধুমাত্র পরস্পর মিলিত হয়ে দ্রবণ সৃষ্টি করে। জলে যে জিনিসটি দ্রবীভূত হবে, জলের অনুর সঙ্গে সেই জিনিসটির বৈদ্যুতিক বন্ধন সৃষ্টি করার ক্ষমতা থাকতে হবে। যেহেতু জলের প্রতিটি অণুর একদিকে সামান্য পরিমাণ ধনাত্মক আধান আর অন্যদিকে কিছুটা ঋণাত্মক আধান থাকে, সেজন্য যে জিনিসটি জলে দ্রবীভূত হবে (নুন, চিনি ইত্যাদি), তাদের অণুর বৈদ্যুতিক আধান যদি এমন হয় যে, সেটি সহজেই জলের অণুর সঙ্গে বৈদ্যুতিক বন্ধন সৃষ্টি করতে পারে, তাহলে ঐ বস্তুটি সহজে জলে দ্রবীভূত হবে এবং মিশে যাবে। জলের অণুগুলি সোডিয়াম ও ক্লোরাইড আয়নের মধ্যকার আকর্ষণ বল কমিয়ে দেয় ফলে, সেই আয়নের মধ্যকার দূরত্ব বৃদ্ধি পায়। এর ফলে, ঐ আয়নগুলি জলে দ্রবীভূত হয়ে যায় এবং সোডিয়াম ক্লোরাইডের (নুন জল) দ্রবণ সৃষ্টি হয়।
পক্ষান্তরে, তেলের অণুগুলি এমনই যে, সেগুলি জলে দ্রবীভুত হয় না। তার কারণ, তেলের অণুগুলির ভিতরকার বন্ধন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তেলের অণুগুলির আকার অনেক বড়ো। তেলের অণুর পরমাণুর (atoms) সংখ্যা জলের পরমাণুর সংখ্যা থেকে অনেক বেশি।
দেখা গিয়েছে যে, তেলের ফোঁটা জলে না মিশে গিয়ে জলের ওপরে আসে। তার কারণ, প্রথমতঃ তেলের ঘনত্ব জলের ঘনত্বের থেকে অনেক কম। দ্বিতীয়তঃ, তেলের নিজস্ব অণুগুলির মধ্যে যে আকর্ষণ বল থাকে, সেই আকর্ষণ বল তেল ও জলের অণুর মধ্যবর্তী আকর্ষণ বল অপেক্ষা অনেক বেশি। সেজন্য জলের মধ্যে থাকাকালীন তেলের অণুগুলি একে অপরের থেকে দূরে সরে যায় না - অর্থাৎ তেল জলে দ্রবীভূত হয় না, আর সেজন্যই তেল এবং জল কখনোই একত্রে মেশে না।
দুধ বা দই যে সাদা রং-এর হয়, সেটা আমাদের সকলের বাস্তব অভিজ্ঞতা। কিন্তু দুধের রং কেন সাদা হয়?
একথা আমাদের জানা আছে যে, সূর্যের সাদা আলো প্রকৃতপক্ষে সাতটি রং-এর সমারোহে তৈরি। সেই সাতটি রং হল যথাক্রমে বেগুনি (violet), গাঢ় নীল (indigo), নীল (blue), সবুজ (green), হলুদ (yellow), কমলা (orange) এবং লাল (red)। এককথায়, সামগ্রিকভাবে এদের বলা হয় VIBGYOR। সূর্যের সাদা আলোর এই উপাদানগুলিকে একটি প্রিজমের সাহায্যে পৃথক করা সম্ভব। কোনো বস্তুর উপর যখন আলো এসে পড়ে এবং তখন সেই বস্তু থেকে প্রতিফলিত রশ্মি আমাদের চোখে এসে পড়ে এবং আমরা বস্তুটিকে দেখতে পাই। বস্তুটি থেকে প্রতিফলিত আলোকরশ্মির রং বা বর্ণের উপর নির্ভর করে যে, বস্তুটিকে আমরা কি রঙের দেখব। বস্তুটি যে রং প্রতিফলিত করবে, আমরা বস্তুটিকে সেই রং-এর বলে দেখব।
দুধের ক্ষেত্রে তার আণবিক গঠন এমনই যে, তারা সূর্যের সাত রঙের কোনোটিকেই শোষণ করতে পারে না। সব কয়টি রংকেই দুধ প্রতিফলিত করে দেয়। আর সেজন্যই, আমরা দুধকে ঠিক সূর্যরশ্মির মতই দেখি। কিন্তু সেই সাদা দুধকে যদি আমরা শুধুমাত্র একটি লাল আলোতে দেখি, সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র লাল আলো দুধের গায়ে এসে পড়ে এবং দুধ তার স্বাভাবিক ধর্মবশতঃ ঐ লাল রংকে প্রতিফলিত করবে। ফলে, ঐ সাদা দুধকে তখন আমরা লাল রঙের দুধ হিসাবে দেখতে পাব। ঠিক একইভাবে, যদি ঐ দুধকেই আমরা সবুজ বা নীল আলোতে দেখি, তাহলে সেই দুধকেই আমরা যথাক্রমে সবুজ বা নীল রং হিসাবে দেখব।
এই হল দুধ সাদা রঙের হওয়ার কারণ।
ফুল ভালোবাসে না, এমন কেউ হয় না। নানা রঙের বাহারী ফুল আমাদের সকলেরই এক আদরের জিনিস। এই ফুল আমরা পাই বিভিন্ন গাছ থেকে। কিন্তু কখনো কি আমরা একথা ভেবেছি যে, গাছে ফুল ফোটে কেন?
গাছের জীবনচক্রে সাধারণতঃ দুটি দশা। একটি হল 'অঙ্গজ-দশা' (vegetative phase) এবং অপরটি হল 'জনন দশা' (reproductive phase)। এর মধ্যে অঙ্গজ দশাতে বীজ থেকে চারা গাছ, চারা গাছ থেকে কচি গাছ, কচি গাছ থেকে গাছের বড়ো হয়ে ওঠা - ডালপাতা গজানো, পাতা বার হওয়া এবং গাছের লম্বা হয়ে ওঠা - এ সব ঘটে। গাছের কান্ডের অগ্রভাগে যে মুকুল থাকে, তাকে বলা হয় 'শীর্ষ মুকুল' বা 'অগ্রমুকুল'। এই মুকুলই গাছকে বেড়ে ওঠার ব্যাপারে সাহায্য করে। আবার 'কাক্ষিক মুকুল' থেকেই গাছের ডাল বা শাখা তৈরি হয়। এভাবেই একটি গাছ ক্রমশ আস্তে আস্তে বেড়ে ওঠে এবং পরবর্তীকালে তার 'জননদশা'র দিকে এগিয়ে চলে।
বছরের কোনো একটা বিশেষ সময়ে কাক্ষিক মুকুল বা অগ্রমুকুল হয়তো কোনো কারণে বাড়তে পারে না। তখন তারা 'পুষ্পমুকুল'-এ রূপান্তরিত হয়। আর তখনই সৃষ্টি হয় ফুলের। এই সময় থেকেই শুরু হতে থাকে জননদশার।
ফুল কোনো গাছে ফুটতে হলে, সেই গাছে তার অঙ্গজ মুকুলকে পুষ্পমুকুলে রূপান্তরিত হতেই হবে। কিন্তু কীভাবে এই রূপান্তরিত হতেই হবে। কিন্তু কীভাবে এই রূপান্তর ঘটে? উদ্ভিদবিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন যে, গোটা ব্যাপারটার মূলে থাকে একপ্রকার রাসায়নিক যৌন হরমোন, যা বেশি পরিমাণে অঙ্গজমুকুলে জমা হলে, সেই অঙ্গজ মুকুল রূপান্তরিত হয় পুষ্পমুকুলে। এই পুষ্পমুকুল একবার তৈরি হলে, হরমোনের কাজ অতি দ্রুত সম্পন্ন হতে থাকে। আর তার ফলে, পুষ্পমুকুল থেকে সৃষ্টি হয় ফুলের।
প্রকৃতপক্ষে, অঙ্গজমুকুল থেকে পুষ্পমুকুলে রূপান্তরিত হওয়া বা পুষ্পমুকুল থেকে ফুল তৈরি হওয়া - এসবই নিয়ন্ত্রিত হয় ঐ বিশেষ ধরনের হরমোন দ্বারা।
এই হল গাছে ফুল ফোটার রহস্য।
মানুষের শরীরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে পাকস্থলী এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আমরা যখন কোনো খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করি, তখন সেই খাদ্যকে হজম করানোর কাজ হল এই পাকস্থলীর (stomach)। যদি কোনো কারণে পাকস্থলীর কাজকর্ম ব্যাঘাত ঘটে, তাহলে আমাদের শরীরে পাচনক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে এবং খাদ্যগ্রহণের পরে সেগুলির হজম হওয়ার ব্যাপারে নানা গন্ডগোল দেখা দেয়।
এখন একটা প্রশ্ন স্বভাবতঃই আমাদের মনে আসতে পারে যে, পাকস্থলী যখন সব কিছুই হজম করাতে পারে, তখন সে নিজেকে হজম করে নেয় না কেন? ব্যাপারটি সত্যই খুব আশ্চর্যের যে, যে অঙ্গটি তার মধ্যেকার সব কিছু হজম করে নিতে পারে, সে নিজেকে হজম করে না কেন?
আসলে, আমাদের পাকস্থলী একটি থলির মতো, যা নানা পেশীদ্বারা গঠিত। পাকস্থলীর গায়ে যে সব গ্রন্থি থাকে, তার থেকে বার হওয়া কড়া অম্লের (acid) সাহায্যেই পাকস্থলী তার ভিতরে আসা সব খাদ্যদ্রব্যকে হজম করে ফেলতে পারে। কিন্তু যাতে পাকস্থলী তার নিজের অংশগুলিকে ঐ উপায়ে হজম করে ফেলতে পারে না, সেজন্য 'মিউকাস কোষ' দ্বারা উৎপন্ন একটি পুরু ও মোটা মিউকাসের স্তর (membrane) পাকস্থলীর গায়ের আবরণে লাগানো থাকে। অল্পপরিমাণ ক্ষার ধর্মবিশিষ্ট (alkaline) এই স্তরটিই পাকস্থলীর নিজস্ব পেশীগুলিকে অম্লরসের দ্বারা হজম হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। যদি পাকস্থলীর গায়ের আবরণের ঐ স্তরটি কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তাহলে পাকস্থলী ঐ ক্ষতিগ্রস্ত স্তরের কোষগুলিকে ফেলে দেয় এবং সেই জায়গায় নতুন কোষ জন্ম নেয়। আর যদি কোনো কারণে ঐ কোষগুলি বেশি পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে রক্ষাকবচ হিসাবে নিঃসৃত ক্ষারধর্মবিশিষ্ট স্তরটির কোষের পরিমাণ কমে যায় এবং পাকস্থলীর গায়ের আবরণটি যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তার ফলেই তখন পাকস্থলীতে অত্যন্ত পীড়াদায়ক ও কষ্টকর 'আলসার' (ulcer) রোগ দেখা দেয় ও ক্ষেত্রবিশেষে মানুষের জীবনসংশয়ও দেখা দেয়।
এই হল পাকস্থলীর নিজেকে হজম না করে নেওয়ার রহস্য।
আমাদের শরীরে যে কোনো জায়গায় কেটে গেলে আমরা ব্যথা অনুভব করি। এটা স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এটাও আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা যে, আমাদের চুল বা নখ কাটার সময়ে আমরা কোনোরকম ব্যথা অনুভব করি না। আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, আমাদের শরীরের এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ মাথা থেকে চুল কেটে ফেলার সময়ে বা হাত-পায়ের নখ কাটার সময়ে আমরা কোনোরকম ব্যথা অনুভব করি না।
কিন্তু কেন এমন হয়?
আসলে আমরা তখনই ব্যথা অনুভব করি যখন আমাদের শরীরে কোনো স্নায়ু বা শিরা আঘাত পেয়ে উত্তেজিত হয়। শিরা বা স্নায়ুর আঘাতই আমাদের শরীরে ব্যথার অনুভূতি জাগায়। আমাদের চুলের বা নখের অগ্রভাগ বা গোড়ায় যেহেতু কোনো স্নায়ু বা শিরা নেই, সেজন্য চুল বা নখ কাটলে আমরা কোনো ব্যথা অনুভব করি না। কিন্তু লক্ষণীয় একটা বিষয় হল এই যে, নখের একেবারে শেষ প্রান্তে (base) বা চুলের শেষপ্রান্তে, যেটি মাথার চামড়ার ঠিক ভিতরে থাকে, সেই অংশের কোষগুলি জীবিত। সেজন্য যদি নখ কাটার সময়ে তার শেষ প্রান্ত, যেটি চামড়ার সঙ্গে লেগে থাকে অথবা চুল একেবারে ছেঁটে ফেলার সময়ে (মাথা ন্যাড়া হওয়ার সময়ে) আমরা কিছুটা ব্যথা অনুভব করি ঐ জীবন্ত কোষগুলি থাকার জন্য।
সুতরাং দেখা যায় যে, শরীরের কোনো অংশে ব্যথা অনুভব করা বা না করা সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, জীবন্ত কোষের সেই অংশে উপস্থিত থাকা বা না থাকার জন্য।
এজন্যই আমরা চুল বা নখ কাটার সময়ে কোনোরকম ব্যথা অনুভব করি না।
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
ফুল ভালবাসে সকলেই। বিশেষ করে সেই ফুল যদি রঙিন হয়। লাল, হলুদ, গোলাপী, বাদামি – কত রকম ফুলই না আমাদের চোখে পড়ে। আসলে পাপড়ির রঙের জন্যই ফুলের রঙ হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফুলের কুঁড়ি অবস্থা থেকে ফুল ফোটা পর্যন্ত তার রঙের তেমন পরিবর্তন হয় না। যেমন জবা ফুল, গাঁদা ফুল ইত্যাদি। গোলাপের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, কখনো কখনো কুঁড়ি অবস্থায় তার পাপড়ির রঙ হালকা থাকে এবং ফুল ফুটলে ধীরে ধীরে সেটি গাঢ় হয়ে পড়ে। স্থলপদ্ম ফুল রাতে ফোটে, সূর্য ওঠার আগে ভোরে পাপড়িগুলি সাদা থাকে এবং বেলা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সেগুলি প্রথমে গোলাপি এবং শেষে লাল রঙের হয়ে যায়। এই লাল রঙ সারাদিন থাকে।
ফুলের পাপড়ির মধ্যে জ্যান্থোফিল, ক্যারোটিন এবং অ্যান্থোসায়নিন নামে নানা রঞ্জক পদার্থ (pigments) থাকে। সেজন্যই পাপড়ির রঙ হয়। এক এক রঞ্জক পদার্থের জন্য এক এক রকম রঙ হয়। এইসব রঞ্জক পদার্থের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্থোসায়ানিন থাকার জন্যই পাপড়ির রঙ ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হয়। অনেক সময়ে একই ধরনের অ্যান্থোসাইয়ানিন পাপড়িগুলিকে ভিন্ন ভিন্ন রঙে রঙিন করে তোলে। পাপড়ির মধ্যেকার কোষের রসের জন্যই এটা সম্ভব হয়। পাপড়ির কোষরস যদি অম্ল (acidic) হয়, তবে পাপড়ির রঙ হবে লাল। কিন্তু যদি ঐ রস ক্ষার (alkaline) জাতীয় হয়, তবে পাপড়ির রঙ হবে বেগুনী, কিন্তু কোনো কোনো সময়ে এর ব্যতিক্রমও দেখা যায়। গোলাপ বা স্থলপদ্ম ফুলের পাপড়ির লাল রঙ হয়, সায়ানিন (cyanin) নামক এক ধরনের অ্যান্থোসায়ানিনের উপস্থিতির জন্য। স্থলপদ্ম ফুল রাত্রে ফোটে বলে, তার পাপড়ির রঙ সাদা থাকে প্রথমে, কারণ তখনো পর্যন্ত তার পাপড়িকোষে সায়ানিন তৈরি হয়নি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, রৌদ্রতাপে ঐ ফুলের পাপড়ির মধ্যে সায়ানিন তৈরি হতে শুরু করে এবং ঐ সায়ানিনের ঘনত্ব যতই বৃদ্ধি পেতে থাকে বেলা বাড়ার সঙ্গে, ততই পাপড়ির রঙ সাদা থেকে গোলাপী এবং পরে গোলাপী থেকে লাল রঙ হয়ে যায়। একবার সম্পূর্ণরূপে সায়ানিন তৈরি হয়ে গেলে, সায়ানিন পাপড়ির মধ্যে থেকে যায় বলে, স্থলপদ্ম ফুলটি সারাদিন লাল রঙেরই হয়ে থাকে, এমনকি সূর্য অস্তাচলে গেলেও পাপড়ি রঙ আর সাদা হয় না।
এই হল কোনো কোনো ফুলের পাপড়ির রঙ বদলানোর রহস্য।
দৈনিন্দিন জীবনে আমাদের সকলেরই অভিজ্ঞতা যে, আমাদের শরীরে মাথার চুল যেভাবে বৃদ্ধি পায়, শরীরের অপরাপর অংশ – যেমন গায়ের লোম বা চোখের পাতার সেই হারে বৃদ্ধি পায় না। কিন্তু কেন এই বৃদ্ধির হারের তারতম্য?
আসলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে যে চুলজাতীয় জিনিস গজিয়ে ওঠে, সেগুলির পৃথক পৃথক বৈশিষ্ট্য আছে। আমাদের মাথার চুলের বৃদ্ধির হার অপেক্ষাকৃত ভাবে অনেক বেশি কিন্তু ত্বকের বা চোখের পাতার বৃদ্ধির হার সেই তুলনায় অনেক কম। প্রকৃতপক্ষে, আমাদের চোখের পাতার উপর যে চুল আছে – যাকে বলা হয় eyelash – সেগুলি আমাদের অজান্তেই নিয়মিতভাবে পড়ে যায় এবং সেই জায়গায় আবার নতুন চুল গজিয়ে ওঠে। এই ঘটনাটি আমাদের অজান্তেই নিয়মিতভাবে ঘটে যায় এবং
আমাদের সকলের সাধারণ এক অভিজ্ঞতা যে, আমরা প্রায়শঃই দেখি যে, বাদুড় নামক প্রাণিটি গাছের ডালে বা তারে ঝুলন্ত অবস্থায় যখন থাকে তখন তারা সাধারণতঃ উল্টোভাবে ঝুলে থাকে। কিন্তু একথা আমরা কখনো ভেবে দেখেছি কি যে, বাদুড় সবসময়ে ঝুলে থাকে কেন এবং তাও সবসময়ে উল্টোভাবে ঝুলে থাকে কেন?
আসলে বাদুড়কে আমরা পাখি বলে মনে করলেও, বাদুড় প্রকৃতপক্ষে একপ্রকার স্তন্যপায়ী প্রাণি(mammals)। তবে তারা উড়তে পারে। যা সাধারণতঃ অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণিরা পারে না। অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণিদের অধিকাংশই উড়তে ও পারে আবার হাঁটতে বা চলতে পারে। কিন্তু বাদুড় উড়তে পারলেও হাঁটতে পারে না বা পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারে না। বিবর্তনবাদের সূত্রে বাদুড়ের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এমনভাবে গঠিত হয়েছে যে, তারা দাঁড়াতে বা চলতে না পারলেও, বাতাসে তারা থাকতে পারে। যখন বাদুড় উড়ে না এবং স্থির অবস্থায় থাকে, তখন তাদের সাম্যাবস্থা বজায় রাখার সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় হল ঝুলে থাকা এবং মাথা নীচের দিকে করে রাখলে, তাদের সাম্যাবস্থা অনেক বেশি স্থিতিশীল (stable) হয়। গাছের ডালে অথবা তারে তাদের পা দুইটিকে আটকে রেখে তারা নিচের দিকে মাথা করে, বেশ নিশিন্তে ঝুলে থাকতে পারে। আর পায়ের সাহায্যে গাছের ডাল অথবা তারটিকে আঁকড়ে ধরে নিশ্চিন্তে ঝুলে থাকতে পারে। আর পায়ের সাহায্যে গাছের ডাল অথবা তারটিকে আঁকড়ে ধরে নিশ্চিন্তে ঝুলে থাকতে পারার জন্য বাদুড়ের পায়ের নখ বিশেষভাবে গঠিত হয়েছে, যার সাহায্যে তারা বেশ সহজে, অনায়াসে এবং আরামে গাছের ডাল বা তারটিকে ভালভাবে আঁকড়ে ধরে থাকতে পারে।
এই হল বাদুড়ের উল্টোভাবে ঝুলে থাকার রহস্যের কথা।
বাতাসের ওজন আছে আর সেজন্য বাতাসের চাপও আছে। এই চাপকেই বায়ুচাপ (atmospheric pressure) বলে। সমুদ্রপৃষ্ঠে বা ভূপৃষ্ঠে বায়ুর চাপ সর্বাপেক্ষা বেশি কারণ ভূপৃষ্ঠের উপরে বায়ুর সবকটি স্তরই বর্তমান থাকে। ভূপৃষ্ঠ থেকে যতই উপরে দিকে উঠা যায়, ততই বায়ুস্তর হাল্কা হতে থাকে এবং তার ওজনও কমতে থাকে। ফলে, ভূপৃষ্ঠ থেকে যতই উপরদিকে উঠা যায়, বায়ুর চাপ ততই হ্রাস পেতে থাকে।
দেখা গিয়েছে যে, সকল পর্বতারোহীরাই যখন পর্বতচূড়ার দিকে যাওয়ার জন্য পর্বতারোহণ করেন, তখন তাঁরা সবসময়ে সঙ্গে অক্সিজেন গ্যাসের সিলিন্ডার বহন করে নিয়ে যান। কিন্তু কেন?
ভূ-পৃষ্ঠে বায়ুর চাপের পরিমাণ ধরা হয় মোটামুটি ১০০০ মিলিবার(১ অ্যাটমস্ফিয়ার)। সমুদ্রতল থেকে যতই উপরে উঠা যায়, বায়ুস্তরের গভীরতা ততই হ্রাস পেতে থাকে কারণ উচ্চস্থানে বায়ুকণার উপস্থিতি কম থাকে। সাধারণতঃ প্রতি ৯০০ ফুট উচ্চতার জন্য ১ ইঞ্চি বা প্রতি ২০০ মিটার উচ্চতার জন্য ৩৪ মিলিবার বায়ুরচাপ হ্রাস পায়। পর্বতের উঁচুস্থানে সেজন্য বায়ুচাপ যথেষ্ট কম।
আমাদের শরীরে সর্বক্ষণ চারিপাশের বায়ুচাপ প্রদান করে, যা সর্বদিকে সমান থাকার জন্য আমরা সেটা অনুভব করতে পারি না। কিন্তু পর্বতের উপরে উঠলে, সেখানে বায়ুচাপ কম হওয়াতে, বায়ুতে অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকে আর সেজন্য সেখানে শ্বাসপ্রশ্বাসের কাজে যাতে কোনোরকম অসুবিধা না হয়, সেজন্যই পর্বতারোহীরা পর্বতারোহণের সময়ে, সঙ্গে করে অক্সিজেনের সিলিন্ডার বহন করে নিয়ে যান। উচ্চস্থানে বায়ুর চাপ কম উপস্থিতি বা অক্সিজেনের অভাব দূর করার জন্যই পর্বতারোহীরা অক্সিজেনে সিলিন্ডার ব্যবহার করে থাকেন।
আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা এই যে, সমুদ্রের জল সবসময়েই বেশ লবণাক্ত। সমুদ্রজলে যথেষ্ট পরিমাণ লবণের উপস্থিতিই এই লবণাক্ত হওয়ার কারণ। কিন্তু পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, মেরু অঞ্চলে যে সমুদ্র আছে, সেখানে সমুদ্রের জলে লবণের পরিমাণ যথেষ্ট কম বা সেখানে জলের লবণাক্ত ভাব অপেক্ষাকৃত অনেক কম।
কিন্তু কেন এমন হয়?
দেখা গিয়েছে যে, তুলনামূলকভাবে নিরক্ষীয় অঞ্চল অপেক্ষা মেরু অঞ্চলে সমুদ্রের জলে লবণতার পরিমাণ কম। লবণাক্তের পরিমাণ সর্বাপেক্ষা বেশি অনুভূত হয় ক্রান্তীয় অঞ্চলে (tropical region)। মেরু অঞ্চলের অক্ষাংশ অনেক বেশি সেজন্য সূর্যরশ্মি সেখানে অত্যন্ত তির্যকভাবে পড়ে। আর এই তির্যক সূর্যরশ্মির জন্য সেই অঞ্চলে সমুদ্রজলের বাষ্পীভবনের হার যথেষ্ট কম। সেজন্য সেখানের জলে লবণাক্তভাবও অনেক কম। এছাড়া, মেরু অঞ্চলে নদীবাহিত বরফগলা জল সমুদ্রে এসে মিশে যায় বলে, সমুদ্র জলের লবণতার ভাগ কমায়। আবার, মেরু অঞ্চলে হিমবাহ-বাহিত বরফের জল মেরু-সমুদ্রে এসে মিশে যায়, ফলে সেই সমুদ্রজলের লবণাক্ত ভাব বৃদ্ধি পায় না।
এই সকল কারণেই সমুদ্রজলের লবণতা মেরু অঞ্চলে তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, মেরু অঞ্চলে সমুদ্রজলের লবণতার পরিমাণ শতকরা ৩ ভাগ (৩%) থেকে শতকরা ১৫ ভাগের (১৫%) মধ্যে থাকে। কিন্তু ক্রান্তীয় বা নিরক্ষীয় অঞ্চলে এই পরিমাণ শতকরা ২০ ভাগ থেকে ৩০ ভাগ পর্যন্ত হতে পারে।
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction
Under Construction